তিউনিশিয়া-লিবিয়া সীমান্তে অভিবাসীদের বাজার

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:২৬

উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়া সীমান্তে অভিবাসীদের ঘিরে বেআইনি ব্যবসা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গবেষকদের একটি যৌথ দল৷
প্রতিবেদনটি
২৯ জানুয়ারি ইউরোপীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে৷ রিসার্চ এন্ড রিসার্চারস বা আরআরএক্স
নামে অজ্ঞাতনামা গবেষকদের একটি দল এই নথিটি তৈরী করেছে৷
ভুক্তভোগীদের
সাক্ষ্য অনুসারে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিউনিশিয়া ও লিবিয়া কর্তৃপক্ষ সীমান্তে আসা
পুরুষ, নারী ও শিশু অভিবাসীদের নিয়ে ব্যবসা করে৷ যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন অবৈধ অভিবাসনের
বিরুদ্ধে লড়াই করতে তিউনিশিয়ার সাথে চুক্তি করেছে৷
২০২৩
সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তিউনিশিয়া থেকে লিবিয়ায় পুশব্যাকের শিকার
সাব-সাহারা আফ্রিকার ৩০ অভিবাসীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে পুরো প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
অভিবাসীদের
সাথে মানবতাবিরোধী অপরাধ, নির্বিচারে আটক, জাতিগত বৈষম্য, জাতিগত ঘৃণার প্ররোচনা, জোরপূর্বক
অন্তর্ধান, নির্যাতন এবং অমানবিক আচরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।
তিউনিশিয়ার
সরকার এসব অভিযোগের ব্যাপারে কোন জবাব দেয়নি৷
২০২৩
সালের ফেব্রুয়ারিতে তিউনিশিয়ার প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদের বর্ণবাদী বক্তব্যের প্রেক্ষিতে
দেশটিতে বেড়েছে কৃষ্ণাঙ্গদের উপর সহিংসতার ঘটনা৷ ইনফোমাইগ্রেন্টস মরুভূমিতে বিতাড়নের
শিকার অভিবাসীদের কাছ থেকে নিয়মিত বিভিন্ন সাক্ষ্য সংগ্রহ করে আসছে৷
আরআরএক্স
গবেষক দলের প্রতিবেদন অনুসারে, সীমান্তে অভিবাসীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ভাবে ৪০ থেকে
৩০০ দিনার পর্যন্ত নেওয়া হয়৷ এছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও জ্বালানির বিনিময়েও অভিবাসীদের
সাথে বেআইনি ব্যবসা করে কর্তৃপক্ষ৷
গবেষকেরা
বলেছেন, তারা সাক্ষ্যৎকারদাতাদের কাছ থেকে টাকা বা অর্থ প্রদানের বিভিন্ন উপায়ের বর্ণনা
পেয়েছেন৷ বিভিন্ন সহিংস প্রেক্ষাপটে এবং রাতে অর্থের লেনদেন করতে বাধ্য হতেন ঝুঁকিতে
পড়া অভিবাসীরা৷
এক
অভিবাসী প্রতিবেদনে বলেন, ‘‘তারা আমাদের পণ্যের মতো বিক্রি করে দিয়েছিল৷ তিউনিশিয়ার
সৈন্যরা আমাদেরকে সীমান্ত পার হতে এবং লিবিয়া পুলিশের ভ্যানের কাছে আত্মসমর্পণ করতে
বলেছিল৷”
বিক্রি
হওয়া বন্দিদের মধ্যে পুরুষ, নারী (যাদের মধ্যে কেউ কেউ গর্ভবতী ছিলেন), দম্পতি, শিশু
এবং অভিভাকহীন অপ্রাপ্তবয়স্করাও রয়েছেন৷ একজন অভিবাসী বলেন, “নারীদের বাজারমূল্য ছিল বেশি”।
লিবিয়ার
মাটিতে পৌঁছানোর পর অনিয়মিত অভিবাসীদের কয়েক দিনের জন্য মরুভূমির বিভিন্ন কারাগারে
আটকে রাখা হয়। পরবর্তীতে সেখান থেকে তাদেরকে লিবিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে
আনুষ্ঠানিকভাবে সংযুক্ত অবৈধ অভিবাসন দমন বিভাগ (ডিসিআইএম) পরিচালিত সরকারি আটক কেন্দ্রে
পাঠানো হয়।
প্রতিবেদনে
সাক্ষ্য দেওয়া অভিবাসী মুসাকে লিবিয়ার উত্তরে তিউনিশিয়ার সীমান্ত থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার
দূরে আল আসাহ কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছিল।
সীমান্তে
অভিবাসীদের এই ‘বিক্রয়’ প্রক্রিয়া দ্বিতীয় পর্যায়ে সংগঠিত হয় লিবিয়ার জেলে৷
জেলে বন্দিদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণের অর্থ দাবি করা হয়৷
২০২৩
সালের জুলাই মাসে ইইউ তিউনিশিয়ার সাথে একটি ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব’
চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর আওতায় অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবেলায় ১০কোটি ইউরো অর্থ সহায়তা
প্রদানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।
অধিকারকর্মীরা
নিয়মিত লিবিয়া ও তিউনিশিয়া কর্তৃপক্ষের অবৈধ কার্যক্রমের নিন্দা জানিয়ে আসছে।
তথ্যসূত্র:
ইনফো মাইগ্র্যান্টস – ০৪.০২.২০২৫