খরায় বিধ্বস্ত কেনিয়ায় টিকে থাকতে মেয়েশিশুদের বিয়ে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৯

উত্তর কেনিয়ার শুষ্ক মরুপ্রায় অঞ্চলে দীর্ঘদিনের খরার কারণে ক্ষুধার তাড়নায় মেয়েশিশুদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে অনেক পরিবার। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের মতে, গত দুই বছরে এই অঞ্চলে বাল্যবিয়ের হার বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
৩৪ বছর বয়সী দুকানো কেল্লে, পাঁচ সন্তানের জননী, তার নিজেরও মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল। এখন সপ্তাহে দুইবার খালি পেটে দীর্ঘ পথ হেঁটে পানির খোঁজে যান। তাদের নিকটবর্তী বোরহোলগুলোও এখন প্রায় শুষ্ক। “আমাদের উট, গরু সব মরে গেছে। এখন মেয়ে বিয়ে দেওয়া ছাড়া কোনো পথ নেই,” বলেন তিনি।
পরিসংখ্যান ও বাস্তবতা
কেনিয়ার মারসাবিট, তুর্কানা ও সামবুরু অঞ্চলে গত ৯ মাসে বৃষ্টিপাত হয়নি বললেই চলে।
ওক্সফামের তথ্য অনুযায়ী, উত্তর কেনিয়ায় গবাদিপশুর ৭০ শতাংশ ইতোমধ্যে মারা গেছে, যা পরিবারগুলোর আয়ের প্রধান উৎস ছিল।
ইউনিসেফ বলছে, ২০২৩ সালে এই অঞ্চলে বাল্যবিয়ের রিপোর্ট করা কেস ছিল ১,২০০, আর ২০২৪ সালে তা বেড়ে ১,৮০০ ছাড়িয়েছে।
খরার ফলে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, যাদের মধ্যে ৬০ শতাংশই নারী ও শিশু।
জলবায়ু ও লিঙ্গ বৈষম্যের সংযোগ
জলবায়ু পরিবর্তন শুধু পরিবেশ নয়, সমাজকেও নাড়িয়ে দিয়েছে। নারীরা ও মেয়েশিশুরা এর প্রধান ভুক্তভোগী। খাদ্য ও পানির ঘাটতি থাকলে প্রথমেই শিক্ষা বন্ধ হয় মেয়েদের এবং তারপর আসে বিয়ের সিদ্ধান্ত।
“বাল্যবিয়ে এখন আর শুধু সামাজিক প্রথা নয়, বরং এটি টিকে থাকার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে,” বলেন স্থানীয় একটি এনজিও’র কর্মী ফাতুমা গালগালো। “একটি উট আর কয়েকটি ছাগলের বিনিময়ে মেয়েটির পরিবার কিছুদিন খেতে পারে।”
সমাধান কোথায়?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সহায়তা, টেকসই পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনা এবং মেয়েদের শিক্ষায় বিনিয়োগ ছাড়া এই সংকটের সমাধান সম্ভব নয়।
জাতিসংঘ ও আফ্রিকান ইউনিয়ন জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছে। ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই অঞ্চলে ৪০ মিলিয়ন ইউরো জরুরি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, যার একটি বড় অংশ নারীদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা নিউজ