গণধর্ষণের ঘটনায় বিদেশি পর্যটকদের কর্ণাটক ছাড়ার হিড়িক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৫, ১৩:০৩

ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের ঐতিহাসিক শহর হাম্পিতে সাম্প্রতিক এক নৃশংস অপরাধের পর শত শত বিদেশি পর্যটক এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। এই ঘটনার শিকার হয়েছেন একজন ইসরায়েলি পর্যটক এবং একজন ভারতীয় কটেজের মালিক, যাদের গণধর্ষণ করা হয়। এছাড়াও, এক পুরুষ পর্যটককে হত্যা করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার, হাম্পির নিকটবর্তী সানাপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, দুই পুরুষ ও তিন নারীর একটি পর্যটক দল নদীর ক্যানালের পাশে রাতের আকাশ দেখছিলেন, তখন তিনজন ব্যক্তি এসে তাদের সঙ্গে অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে তর্ক শুরু করে। পরে তারা পর্যটকদের ওপর হামলা চালায়।
পুলিশ জানিয়েছে, তিনজন অভিযুক্তকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুইজনকে শনিবার আটক করা হয় এবং তৃতীয়জনকে রবিবার তামিলনাড়ু রাজ্য থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে কর্ণাটকে আনা হয়। এ ঘটনায় হত্যার চেষ্টা, ডাকাতি এবং ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়েছে।
হাম্পি, যা একসময় বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল, ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত। প্রতি বছর এখানে ১ লক্ষেরও বেশি বিদেশি পর্যটক আসেন, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইসরায়েলি এবং ইউরোপীয় পর্যটক রয়েছেন। তবে, সাম্প্রতিক ঘটনার কারণে ৯০% পর্যটক এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। স্থানীয় হোটেল এবং হোমস্টেগুলোতে পর্যটকদের উপস্থিতি এখন প্রায় নেই বললেই চলে।
পর্যটক গাইড সৈয়দ ইসমাইল জানান, "পর্যটকদের দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করতে এবং রাতের বেলা নির্জন জায়গায় না যেতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।"
ঘটনার পর, রাজ্যের মন্ত্রী শিবরাজ তাংগাদাগি পর্যটকদের রাতে একাকী ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছেন। পুলিশ ও প্রশাসন পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
ভারতে নারী নির্যাতনের ঘটনা দীর্ঘদিন ধরেই একটি গুরুতর সমস্যা। ২০১২ সালে দিল্লির এক মেডিকেল শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলে, যার ফলে ২০১৩ সালে কঠোর ধর্ষণবিরোধী আইন প্রণীত হয়। তবুও, ২০২২ সালে ভারতের জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরো প্রায় ৩২,০০০ ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে, যা বাস্তবে আরও বেশি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সামাজিক কলঙ্ক, পুলিশের ওপর অবিশ্বাস এবং আইনি ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতার কারণে অনেক ঘটনা প্রকাশ্যে আসে না।
২০২৩ সালে ঝাড়খণ্ড রাজ্যে এক ব্রাজিলিয়ান-স্প্যানিশ পর্যটকের গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।
হাম্পির সাম্প্রতিক ঘটনাটি শুধুমাত্র স্থানীয় পর্যটন শিল্পের ওপর নয়, বরং ভারতের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কেও প্রশ্ন তুলছে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি