Logo
×

Follow Us

এশিয়া

পাকিস্তানে আফগান শরণার্থীদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০৮

পাকিস্তানে আফগান শরণার্থীদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

পাকিস্তান সরকারের উদ্যোগে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া গণ-প্রত্যাবাসন অভিযানে ইতোমধ্যে ৯ লাখ ১৩ হাজারের বেশি আফগান নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সাম্প্রতিককালে এই সিদ্ধান্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতি, রাজনৈতিক চাপে সৃষ্ট অভিবাসন নীতি এবং মানবিক উদ্বেগ—তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর মধ্যে কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

গত চার দশক ধরে আফগানিস্তানে যুদ্ধ, তালেবান দখল, সোভিয়েত আগ্রাসন থেকে শুরু করে মার্কিন সামরিক অভিযান; সব মিলিয়ে আফগানিস্তানের কোটি মানুষ বাধ্য হয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছেন।

বর্তমানে পাকিস্তানে আশ্রিত আফগান নাগরিকদের মধ্যে-

প্রায় ১৩ লাখ ‘প্রুফ অব রেসিডেন্স (PoR)’ কার্ডধারী (২০০৬ সালে চালু)। প্রায় ৮ লাখ ‘আফগান সিটিজেন কার্ড (ACC)’ ধারী (২০১৭ সালে চালু) এবং আরো হাজার হাজার অবৈধ বা অনিবন্ধিত আফগান অভিবাসী রয়েছেন।

এই জনগোষ্ঠী পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে, বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখাওয়া, করাচি, কোয়েটা ও পাঞ্জাব অঞ্চলে ছড়িয়ে রয়েছেন।

২০২৩ সালের শেষ প্রান্তে পাকিস্তানের সরকার ঘোষণা দেয়- দেশে থাকা "অবৈধ বিদেশি" ও ACC হোল্ডাররা ৩১ মার্চ ২০২৫-এর মধ্যে স্বেচ্ছায় দেশ ছাড়তে না পারলে ১ এপ্রিল থেকে তাদের জোরপূর্বক বহিষ্কার করা হবে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, শুধু ৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ফেরত পাঠানো হয়েছে ৭,০০০+ আফগান।

অভিযানের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ফেরত গেছেন ৯,১৩,৩০১ জন।

এপ্রিল মাসে এখন পর্যন্ত ফেরত পাঠানো হয়েছে ১৩,৫০০+ জনকে। পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে আটক ও ফেরত পাঠানো হয়েছে ৬,১৩২ জনকে এবং হোল্ডিং সেন্টারে রাখা হয়েছে ৮,২২৭ জনকে।

সরকার দাবি করছে, দেশের নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার জন্য এই পদক্ষেপ জরুরি। বিশেষ করে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (TTP) সহ অন্যান্য চরমপন্থি গোষ্ঠীর কার্যক্রমে আফগান নাগরিকদের সহায়তার অভিযোগ তাদের উদ্বিগ্ন করেছে।

তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, এই ধরনের অভিযোগের আড়ালে আফগান অভিবাসীদের উপর পুলিশি হয়রানি, রাতারাতি আটক ও জোরপূর্বক বহিষ্কারের ঘটনা ঘটছে, যা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক নীতির পরিপন্থি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ফেরেশতা আব্বাসি বলেন, "পাকিস্তান তার আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে। আফগানিস্তান এখনো নিরাপদ নয়, তাই এমন অবস্থায় মানুষকে জোর করে ফেরত পাঠানো অমানবিক।"

আফগানিস্তানের অভিবাসন ও প্রত্যাবাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্দুল মতালিব হাক্কানি বলেন, "এটি একটি একতরফা সিদ্ধান্ত, যা আন্তর্জাতিক, ইসলামিক ও প্রতিবেশী সম্পর্কের নীতিমালার পরিপন্থি। ফেরত পাঠানোর বিষয়টি যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, যেন সম্মানজনকভাবে মানুষ ঘরে ফিরতে পারে।"

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পাকিস্তানকে আহ্বান জানিয়েছে, আফগান শরণার্থীদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের জন্য একটি স্পষ্ট পরিকল্পনা ও মানবিক সহায়তা কাঠামো গড়ে তুলতে। বিশেষ করে যাদের দেশে ফিরে জীবনহানির আশঙ্কা রয়েছে, তাদের জন্য আশ্রয় বা তৃতীয় দেশে স্থানান্তরের সুযোগ তৈরির দাবিও উঠেছে।

পাকিস্তানে আফগান শরণার্থীদের সংকট এখন আর শুধু মানবিক বিষয় নয়, এটি পরিণত হয়েছে এক জটিল কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে। এই পরিস্থিতিতে ন্যূনতম মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সংহতি, স্বচ্ছ নীতি ও দুই দেশের মধ্যকার বাস্তবসম্মত সংলাপ।

তথ্যসূত্র: আরব নিউজ


Logo