Logo
×

Follow Us

এশিয়া

পর্যটন খাতে রেকর্ড করছে জাপান

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪২

পর্যটন খাতে রেকর্ড করছে জাপান

হোক্কাইদোর নরম তুলতুলে মিহি তুষারে আচ্ছাদিত পর্বত শিখর থেকে শুরু করে ওসাকার কেন্দ্রস্থলের নিয়ন আলোয় আলোকিত পানাহার পর্যন্ত, সর্বত্রই রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক জাপান ভ্রমণে আসছেন। দেশব্যাপী হোটেল মালিকরা জমজমাট ব্যবসা করছেন। তবে এত মানুষের আগমনের কারণে সমস্যাও কিন্তু কিছু কম নয়। বিরাট সংখ্যক এই পর্যটকদের ভিড় সামলাতে কিছু এলাকা হিমশিম খাচ্ছে। অন্যদিকে, কিছু এলাকা আবার পর্যটকদের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। 

মধ্য জাপানের একটি তুষারাবৃত গ্রাম হাকুবা বছরের এই সময়ে বেশ জনবহুল। স্কি এবং স্নোবোর্ডিংয়ের জন্য সেখানকার ঢালগুলো বিদেশি পর্যটকদের ভিড়ে পরিপূর্ণ। সেখানে বাস পরিষেবা পুরোদমে চলছে এবং হোটেলগুলো রমরমা ব্যবসা করছে।

ট্যাক্সি কোম্পানিগুলোও এর ফলে উপকৃত হচ্ছে। একজন কোম্পানির কর্মকর্তা বলেছেন, প্রতিদিন বুকিং ৩০০তে পৌঁছাতে পারে। কিছু বিদেশি অতিথি এমনকি টোকিওর বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সি করে সরাসরি হাকুবাতে এসে থাকেন, ফলে একমুখী ভাড়া ১,৩০০ ডলারেরও বেশি।

তবে পর্যটন শিল্পের এই সুসময় কেবল হাকুবার মধ্যেই সীমিত নয়। এই বছরের শুরুতে জাপানের জাতীয় পর্যটন সংস্থার অনুমান অনুযায়ী ২০২৪ সালে ৩ কোটি ৬৮ লাখেরও বেশি বিদেশি পর্যটক দেশটি ভ্রমণ করেছেন এবং সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, রাত্রিকালীন হোটেলে থাকার সংখ্যা ১৬ কোটি ছাড়িয়ে গেছে, যা হলো ২০২৩ সালের তুলনায় ৩৮ শতাংশ বেশি।

মূলত ইয়েন দুর্বল হয়ে পড়ায় বিদেশি পর্যটকদের জন্য জাপান ভ্রমণ আরো সস্তা হয়ে উঠেছে, যে কারণে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক এখানে আসছেন। একই সাথে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও একটি ভূমিকা পালন করেছে। এ ক্ষেত্রে তথাকথিত "ইনফ্লুয়েন্সারদের" পোস্ট জাপানের আবেদন বাড়াতে সাহায্য করছে।

যেসব অঞ্চল এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারছে, তাদের জন্য এটা কোনো সমস্যা নয় কিন্তু অন্যদের জন্য বিষয়টি খুবই চ্যালেঞ্জিং। কর্মকর্তারা বলছেন, অতিরিক্ত পর্যটন একটি সমস্যা। তবে একইসাথে কীভাবে এই উচ্চ আগমনকে টেকসইভাবে ধরে রাখা যায়, তা নিয়ে কর্মকর্তারা খুব উদ্বিগ্ন।

ফুজি পর্বত হলো এ রকমই একটি উদাহরণ। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এই সমস্যা সামাল দিতে পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি রোধে টোলগেটের মতো একাধিক ব্যবস্থা চালু করেছে।

পর্যটন এজেন্সির কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশ থেকে আগত ভ্রমণকারীদের প্রায় অর্ধেকই জাপানের তিনটি প্রধান মহানগর অঞ্চলে অবস্থান করে থাকেন। এগুলো হলো যথাক্রমে- বৃহত্তর টোকিও অঞ্চল, ওসাকা-কিয়োতো অঞ্চল এবং আইচি জেলা; যেখানে নাগোইয়া শহরটি অবস্থিত।

গিফু জেলার শিরাকাওয়া-গো গ্রামের মতো আরো কিছু দূরবর্তী গন্তব্যও পর্যটকদের কাছে খুব জনপ্রিয়। এলাকাটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে নিবন্ধিত, ফলে পর্যটকরা সেখানে যেতে পছন্দ করেন।

তবে এসব স্থানের বাইরে আরো বেশ কিছু আঞ্চলিক এলাকা রয়েছে, যেখানে পর্যটকরা সাধারণত গমন করেন না। মিযুহো রিসার্চ অ্যান্ড টেকনোলজির একজন ঊর্ধ্বতন অর্থনীতিবিদ সাকানাকা ইয়াইয়োই বলেন, গ্রামীণ এলাকাগুলোতে যাতে সহজে যাওয়া যায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, "স্থানীয় পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত না করে কেবল হোটেল তৈরির দিকে মনোযোগ দিলে পরিস্থিতি বদলাবে না।"

এছাড়া জাপানের দেশীয় পর্যটকদের কথাও ভাবতে হবে। ইয়েন দুর্বল হয়ে পড়ায় তাদের ব্যয় ক্ষমতা কমে গেছে এবং বিদেশ থেকে আগত পর্যটকদের চাহিদার কারণে হোটেল ও অন্যান্য জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

জাপান সরকারের লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে ৬ কোটি বিদেশি দর্শনার্থীকে দেশে স্বাগত জানানো। এই সংখ্যক পর্যটকরা সম্মিলিতভাবে প্রতি বছর ১৫ ট্রিলিয়ন ইয়েন বা ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় করতে পারেন বলে সম্ভাবনা রয়েছে।

তথ্যসূত্র: এনএইচকে নিউজ 

Logo