অবশেষে ভারতের টুরিস্টদের ভিসা দেয়া শুরু করলো বাংলাদেশ

দীর্ঘ বিরতির পর অবশেষে ভারতীয়দের জন্য বাংলাদেশি ভিসা পরিষেবা পুনরায় চালু হলো। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশন পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছে, এবং সেখান থেকেই ভিসা প্রদান শুরু হয়েছে।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে, যার ফলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ভিসা পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। হাই কমিশনের কর্মীদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেওয়া হয় এবং ভারতীয়দের জন্য ভিসা কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। তবে কয়েক মাস পর ফের এই পরিষেবা চালু হলো।

প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক আবেদন

উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষ মূলত আগরতলার সহকারী হাই কমিশন থেকেই বাংলাদেশে ভিসার জন্য আবেদন করেন। হাই কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ৫০০-৬০০ ভিসা আবেদন জমা পড়ে।

ভিসার আবেদন শুরু হওয়ার পরপরই বহু মানুষ আবেদন করতে শুরু করেছেন। হাই কমিশনের কর্মকর্তা নবীন রায় জানিয়েছেন, প্রথম দিন ১০০টি আবেদন জমা পড়লেও, দ্বিতীয় দিন থেকে তা বেড়ে ২০০-এর বেশি হয়েছে। ভিসা পরিষেবা বন্ধ হওয়ার আগে প্রতিদিন প্রায় ২৫০-৩০০ আবেদন জমা পড়ত, যা বর্তমানে আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

আবেদনকারীদের প্রতিক্রিয়া

অনেক আবেদনকারী দীর্ঘদিন পর আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত। আবেদনকারী বিশ্বজিৎ দেব বলেন, "দীর্ঘদিন পর আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে পারবো।"

অন্য এক আবেদনকারী সুনন্দা দেবনাথ বলেন, "গত কয়েক মাস ধরে ভিসা পরিষেবা বন্ধ থাকায় বাংলাদেশের আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল। ফোনে সবসময় কথা বলা সম্ভব হয় না। এখন ভিসা চালু হওয়ায় তাদের সামনে দেখতে পারবো।"

ব্যবসায়ীদের জন্য আশার আলো

ভিসা পরিষেবা পুনরায় চালু হওয়ায় শুধু পর্যটকরাই নন, বরং ভিসা-সংক্রান্ত কাজে যুক্ত ব্যবসায়ীরাও খুশি। আগরতলার এক ব্যবসায়ী রতন দেবনাথ জানান, "ভিসা পরিষেবা চালু হওয়ায় আমরা অক্সিজেন ফিরে পেয়েছি। আশা করছি, আমাদের ব্যবসা আবার চাঙ্গা হবে।"

ভিসা প্রক্রিয়া ও সময়সীমা

হাই কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভিসার আবেদন জমা দেওয়ার অন্তত তিনদিন পর তা অনুমোদন করা হবে। তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে এই সময়সীমা আরও বাড়তে পারে।ভারতীয় ভিসা কবে চালু হবে?

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতীয়দের জন্য ভিসা চালু হলেও, ভারত এখনো বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা পরিষেবা চালু করেনি। ২০২৩ সালের আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশি পর্যটকদের ভারতে ভ্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। সাধারণত, ভারতে বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে প্রায় ২৩% বাংলাদেশি হয়ে থাকে, যারা চিকিৎসা, ব্যবসা এবং অন্যান্য কাজে দেশটিতে যান।

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশি পর্যটকদের ভারতে প্রবেশে কড়াকড়ির কারণে ভারতের পর্যটন এবং চিকিৎসা খাতেও প্রভাব পড়েছে। দুই দেশের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ পর্যটন ও ভিসা পরিষেবা চালু হলে উভয় দেশের ব্যবসা ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

তথ্যসূত্র: ডয়েসে ভেলে রিপোর্ট