
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠছে চিকিৎসা সহযোগিতা। সম্প্রতি চীনভিত্তিক চারটি হাসপাতালের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত বাংলাদেশি শিশুদের জন্য চীনে উন্নত ও সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার দ্বার খুলে গেছে।
চীনের কুনমিং প্রদেশে অবস্থিত ইউনান ফুওয়াই কার্ডিওভাসকুলার হাসপাতালসহ আরো তিনটি প্রতিষ্ঠান এখন বাংলাদেশি শিশুদের জন্য হার্ট সার্জারি ও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাসেবা প্রদান করছে। সম্প্রতি ১৪ জন শিশু ও তাদের পরিবারের সদস্যসহ মোট ৩১ জনকে চীনে পাঠানো হয়েছে, যাদের সব চিকিৎসা, থাকা-খাওয়া, যাতায়াত এবং অনুবাদ সহায়তা চীন সরকার ও বাংলাদেশ দূতাবাসের যৌথ ব্যবস্থাপনায় নিশ্চিত করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, চীনে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে অনুবাদ ও সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন নিশ্চিত করা, যা চিকিৎসা প্রক্রিয়াকে করেছে আরো কার্যকর ও রোগীবান্ধব।
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত এবং চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত উভয়ের মতে, এই চিকিৎসা সহযোগিতা কেবল একটি মানবিক উদ্যোগ নয়, বরং এটি দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য কূটনীতির ভিত্তি গড়ে তুলছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশি চিকিৎসক ও নার্সদের চীনে প্রশিক্ষণের সুযোগ, যৌথ গবেষণা এবং স্বাস্থ্য প্রযুক্তির স্থানান্তরের পথও খুলে যেতে পারে।
চীনের চিকিৎসা ভিসা (Medical Visa) নীতি ও বাংলাদেশের সুবিধা
চীনে চিকিৎসার জন্য আগ্রহী বিদেশি নাগরিকদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ‘M ভিসা’ ও ‘S ভিসা’, যার মাধ্যমে রোগী ও একজন সহায়ক আত্মীয় চিকিৎসার উদ্দেশ্যে নির্ধারিত মেয়াদের জন্য চীনে প্রবেশ করতে পারে। তবে বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক চিকিৎসা সহযোগিতার আলোকে ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুততর এবং সহজীকরণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে চীনা দূতাবাস এখন চিঠিপত্র ও চিকিৎসা অনুমোদনপত্র যাচাইয়ের পর বিশেষ প্রক্রিয়ায় মেডিকেল ভিসা ইস্যু করছে। ভিসা আবেদনের জন্য রোগীর মেডিকেল রিপোর্ট, চীনা হাসপাতালের আমন্ত্রণপত্র, পাসপোর্ট এবং দূতাবাসের রেফারেন্স লেটার জমা দিতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় চীনে চিকিৎসা গ্রহণ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সাশ্রয়ী ও সময়োপযোগী।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
এই সহযোগিতা আরো সম্প্রসারিত হলে বাংলাদেশের রোগীদের জন্য চীনের উচ্চমানের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশেও চীনের প্রযুক্তিগত সহায়তায় আধুনিক হাসপাতাল স্থাপন, যৌথ চিকিৎসা কর্মসূচি এবং চিকিৎসা খাতে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের অংশীদারিত্ব কেবল দুই দেশের মধ্যে নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটেও চিকিৎসা-অর্থনীতির একটি শক্তিশালী উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে।
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশে চীনা দূতাবাস, চীনের ইউনান ফুওয়াই হাসপাতাল, Jamuna TV, চীনের ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।