Logo
×

Follow Us

উত্তর আমেরিকা

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের জবাবে কোন দেশ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের জবাবে কোন দেশ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক আরোপের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিজেদের মতো করে ব্যবস্থা নিচ্ছে। সর্ব ব্যাপক এই শুল্কের প্রভাব মোকাবিলায় সবাই কোমর বেঁধে নেমেছে। অনেক দেশ আবার আগে থেকেই ব্যবস্থা নিচ্ছে, যে কারণে তাদের ওপর শুল্কের খড়্গ অতটা মারাত্মক হয়নি। আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে তারা ইতোমধ্যে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। ২ এপ্রিল বিশ্বের প্রায় সব দেশর পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করে সেই দিনকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস আখ্যা দিয়েছেন ট্রাম্প। দেখে নেওয়া যাক, বড় দেশগুলোর মধ্যে কারা কী ব্যবস্থা নিচ্ছে—

ইউরোপীয় ইউনিয়ন

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে ‘বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় আঘাত’ বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেন। ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ইউরোপ ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নেবে এবং সতর্কবার্তা দিয়েছেন, যদি আলোচনা ব্যর্থ হয়, তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যারা ২০ শতাংশ শুল্কের আওতায় পড়েছে, পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

উরসুলা আরো বলেছেন, এই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণে নিত্যপণ্য, পরিবহন ও ওষুধের দাম বেড়ে যাবে। এতে নিম্ন আয়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে বিশ্ব বাণিজ্যব্যবস্থায় গুরুতর ত্রুটি আছে বলেও স্বীকার করেছেন তিনি। শুল্কারোপের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসতে ইইউ প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে প্রয়োজনে পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুতি রয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রকে ছেড়ে কথা বলে না। গত মার্চ মাসে ইইউর ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যে মার্কিন শুল্ক আরোপের জবাবে তারা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে এই শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা।

চীন

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের জবাবে এবার প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করেছে চীন। অনেকটা ইটের বদলে পাটকেল মারার ঢঙে ব্যবস্থা নিয়েছে চীন।

চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ১০ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। সেই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাঁচামালের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করবে তারা। এ ছাড়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে দেশটি।

যুক্তরাজ্য

ব্রিটেনের ওপর ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর জবাবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, নিজ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ‘শুল্ক-ঝড়’ থেকে রক্ষা করার জন্য নতুন শিল্পনীতি গ্রহণ করতে প্রস্তুত তিনি। পাশাপাশি মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে অর্থনৈতিক চুক্তির চেষ্টাও চালিয়ে যাবেন তিনি। স্টারমারের মতে, ‘আমরা বিশ্বাস করি না, বাণিজ্যযুদ্ধই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ।’

স্টারমার মনে করেন, ট্রাম্পের ঘোষণার ফলে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা বাড়বে। যদিও অনেকেই ট্রাম্পের শুল্কনীতিতে ‘শাপে বর’ দেখছেন। তিনি মনে করেন, বিভিন্ন দেশ তাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে জোর দেবে। একই সঙ্গে তারা অর্থনৈতিক সংস্কারের পথেও হাঁটবে। 

ভারত

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের হাত থেকে বাঁচতে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য যেমন কাঠবাদাম ও ক্র্যানবেরিতে আরো শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব দিয়েছে। এর আগে রয়টার্সের আরেক সাংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ২৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্যের মধ্যে ৫৫ শতাংশের ওপর শুল্ক কমাতে রাজি হতে পারে ভারত।

২৬ মার্চ লোকসভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভারতের গড় আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ করা হয়েছে। বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী জিতিন প্রসাদ এক প্রশ্নের জবাবে জানান, ২০২৩ সালে ভারতের সরল গড় শুল্কহার ছিল ১৭ শতাংশ। ২০২৫-২৬ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটের পর সরল গড় শিল্প শুল্ক ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।

এ ছাড়া চলতি বছরের বাজেটে মার্কিন মোটরসাইকেলে শুল্ক হ্রাস করেছে ভারত। তখন মার্কিন ব্র্যান্ড হারলে ডেভিডসনের আমদানিতে ভারত আরও ১০ শতাংশ শুল্ক হ্রাস করে। এর আগে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হারলে ডেভিডসনের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কমিয়েছিল ভারত। এবারের বাজেটে যা আরো কিছুটা কমানো হয়।

ভিয়েতনাম

ভিয়েতনামের পণ্যে ৪৬ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এর আগে ভিয়েতনাম সরকার জানিয়েছিল, এ বিষয়ে আলোচনা চায় তারা। সেই আলোচনার জন্য এক থেকে তিন মাস সময় চায় তারা। এই কয়েক মাস তাদের চড়া শুল্কের হাত থেকে নিস্তার দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেছে তারা। ৪ এপ্রিল ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক টু ল্যামের সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির বিনিময়ে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির শুল্ক শূন্যে নামিয়ে আনতে চায়।

ভিয়েতনাম সরকার আগেই জানিয়েছে, বিমান ও তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসসহ আরো বেশি মার্কিন পণ্য ভিয়েতনামে আমদানির জন্য ব্যবস্থা নেবে তারা। পাশাপাশি মার্কিন কোম্পানিগুলো যেন সহজে ভিয়েতনামে বিনিয়োগ করতে পারে, সেই লক্ষ্যেও ব্যবস্থা নেবে তারা।

বস্তুত ২ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে যে কজন বিশ্বনেতা প্রথমেই আলাপ করেছেন, টু ল্যাম তাঁদের মধ্যে অন্যতম। একই সঙ্গে তিনি ট্রাম্পকে জানিয়েছেন, ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি পণ্যে গড় শুল্ক মাত্র ৯ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ তারা নিজেদের অবস্থান সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।

তথ্যসূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

Logo