
মোবাইল ফোনের চার্জার হিসেবে পাওয়ার ব্যাংক অনেকের নিত্য সঙ্গী। বিশেষ করে যারা প্রতিনিয়ত ট্রাভেল করেন। পাওয়ার ব্যাংকের কারণে দুর্ঘটনা ঘটা বিরল ঘটনা। তবু সংশ্লিষ্টদের মত, পাওয়ার ব্যাংকের কারণে গুরুতর অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি রয়েছে। ফলে পাওয়ার ব্যাংক বা লিথিয়াম ব্যাটারি বিমান নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী এয়ারলাইনগুলো পাওয়ার ব্যাংক সংক্রান্ত নিয়ম আরো কঠোর করছে। ফলে এটি ঘন ঘন ভ্রমণকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। যারা মূলত এই পোর্টেবল চার্জারের ওপর নির্ভর করতে হয়।
কেন পাওয়ার ব্যাংক ঝুঁকিপূর্ণ?
লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির গঠনের কারণেই এই ব্যাটারিগুলোর ভেতরে উচ্চ শক্তির সঞ্চিত ক্ষমতা থাকে। যদি এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, শর্ট সার্কিট হয় বা অতিরিক্ত গরম হয়, তাহলে বিস্ফোরণ বা আগুন লাগার ঘটনা ঘটতে পারে। থার্মাল রানওয়ে প্রক্রিয়ার কারণে, পাওয়ার ব্যাংকের ব্যাটারি অতিরিক্ত গরম হয়ে গেলে অন্য সেলগুলোকেও উত্তপ্ত করে। ফলে আগুন ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ে।
এয়ারলাইন্সগুলো বর্তমানে পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে অনেক কড়াকড়ি নিয়ম চালু করেছে। কারণ লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির আগুন ধরার ঝুঁকি বিমান চলাচলের জন্য মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। নিচে কিছু সাধারণ ও কড়া নিয়ম দেওয়া হলো, যা বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ এয়ারলাইন্স মেনে চলছে।
১. কেবল হাত ব্যাগে বহন করার অনুমতি:
• চেক-ইন লাগেজে পাওয়ার ব্যাংক রাখা একেবারেই নিষিদ্ধ। কারণ আগুন লাগলে তা সঙ্গে সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়।
• হ্যান্ড ব্যাগ বা ক্যারি-অন ব্যাগে রাখতে হবে, যেন কোনো সমস্যা হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
২. ব্যাটারির ক্ষমতার সীমা:
• ১০০ Wh পর্যন্ত: সাধারণভাবে অনুমোদিত।
• ১০০-১৬০ Wh: বেশির ভাগ এয়ারলাইন্সে অনুমতির প্রয়োজন হয়; কখনো দুটি ব্যাটারির বেশি বহন করা যায় না।
• ১৬০ Wh-এর বেশি: একেবারেই নিষিদ্ধ। এসব মূলত উচ্চ ক্ষমতার, যেমন ড্রোন বা প্রফেশনাল ক্যামেরার ব্যাটারিতে থাকে।
৩. শক্তির তথ্য দৃশ্যমান থাকতে হবে:
• পাওয়ার ব্যাংকে স্পষ্টভাবে capacity (mAh) ও voltage (V) লেখা থাকতে হবে।
• যদি তথ্য দেখা না যায় বা সন্দেহজনক হয়, তাহলে নিরাপত্তা চেক-ইন গেট থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হতে পারে।
৪. ফ্লাইটে চার্জ দেওয়া নিষিদ্ধ হতে পারে:
• অনেক এয়ারলাইন্স এখন ফ্লাইট চলাকালে পাওয়ার ব্যাংক দিয়ে ফোন বা অন্য ডিভাইস চার্জ দিতে নিষেধ করছে।
• কিছু এয়ারলাইন্স নির্দেশ দেয়, পাওয়ার ব্যাংক পুরো সময় বন্ধ রাখতে হবে।
৫. ক্ষতিগ্রস্ত বা ফোলা পাওয়ার ব্যাংক নিষিদ্ধ:
• যদি ব্যাটারিটি ফোলা, ক্ষতিগ্রস্ত বা অস্বাভাবিক গরম হয়, এটি সঙ্গে নেওয়া নিষিদ্ধ।
কীভাবে নিরাপদে বহন করবেন?
• ব্যাটারির পোর্ট কভার করে রাখুন বা কেস ব্যবহার করুন।
• ভাঙা বা ফুলে ওঠা ব্যাটারি সঙ্গে নেবেন না।
• যদি অতিরিক্ত গরম হতে দেখেন, সঙ্গে সঙ্গে ক্রু সদস্যকে জানান।
আন্তর্জাতিক নিয়ম ও নজরদারি:
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন ICAO (International Civil Aviation Organization) ও IATA (International Air Transport Association) এই ঝুঁকি নিয়ে নিয়ম জারি করেছে। অনেক বিমানবন্দরে স্ক্যানিয়ের সময় পাওয়ার ব্যাংক আলাদা করে চেক করা হয়।
নির্দিষ্ট এয়ারলাইন্সের পোর্টেবলে চার্জার রাখার নিয়ম:
এমিরেটস্ এয়ারওয়েজ
১০০ Wh পর্যন্ত অনুমোদিত; চার্জ দেওয়া নিষিদ্ধ; লাগেজে রাখা যাবে না।
কাতার এয়ার ওয়েজ
ব্যাটারি হ্যান্ড ব্যাগে নিতে হবে; ১০০ Wh পর্যন্ত অনুমোদন, বেশি হলে অনুমতি প্রয়োজন।
সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স
একাধিক ব্যাটারির অনুমতি নেই; চার্জ বন্ধ রাখতে বলা হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স
চেক-ইন লাগেজে একেবারে নিষিদ্ধ; স্ক্যানিংয়ে আলাদা করে দেখাতে হয়।
ফলে পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে বিমানে চলাচল দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে ভ্রমণকারীদের জন্য। পাওয়ার ব্যাংক বিড়ম্বনা এড়াতে ভ্রমণের আগে বা বিমান বন্দরে কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারেন। তাদের পরামর্শ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: গালফ নিউজ ও অন্যান্য সূত্র।