টাকার বিনিময়ে কিডনি: বৈশ্বিক অঙ্গ পাচার চক্রের ভেতরের গল্প

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৭

বিশ্বব্যাপী কিডনি পাচার একটি গোপন, ভয়াবহ ও অবৈধ কর্মকাণ্ড; যা দিন দিন আরো বিস্তৃত হচ্ছে। দরিদ্র ও অসচ্ছল ব্যক্তিদের টার্গেট করে, তাদের কিডনি বিক্রির প্রলোভন দেওয়া হয়। কিডনি পাচার চক্রের মাধ্যমে সাধারণত এমন মানুষদের বাছাই করা হয়, যারা আর্থিকভাবে সংকটে আছেন এবং নিজেদের কিডনি বিক্রির মাধ্যমে কিছু অর্থ কামানোর জন্য রাজি হন। কিন্তু এই চক্রের মধ্যে আছেন অনেক অভিজ্ঞ পাচারকারীরা, যারা তাদের স্বার্থে অসহায় মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের প্রতারিত করেন।
কিডনি পাচারের এই চক্রের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে অর্থের লোভ। গরিব মানুষদের কিডনি বিক্রির জন্য আকৃষ্ট করা হয়, যেখানে মাঝখানে নানা ধরনের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, যেমন বিদেশে ভালো কাজের সুযোগ বা আর্থিক সুবিধা। বাস্তবে কিডনি বিক্রি করে এই দাতারা কিছুই লাভ করেন না। অনেক সময় তাদের শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়, এমনকি পরে কখনো কখনো তাদের কিডনি বিক্রি হয়ে যাওয়ার পরও কোনো চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয় না।
এছাড়া এই চক্রে বহু দেশের অসাধু দালাল ও অবৈধ ক্লিনিক যুক্ত থাকে, যারা নকল কাগজপত্র তৈরি করে এবং বিদেশে কিডনি পাচারের জন্য ভুয়া নথি বানিয়ে দেয়। এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন দেশে কিডনি পাচারের কাজ করে থাকে।
এই পাচার চক্রে অংশগ্রহণকারী অনেক মানুষই অত্যন্ত হতাশাজনক অবস্থায় পড়েন। কিডনি বিক্রির পর তারা আর্থিক সুবিধা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেলেও প্রায়ই তা পূর্ণ হয় না। অধিকাংশ সময় তাদের জীবনের অবশিষ্ট অংশ কাটে চিকিৎসা সহায়তার অভাবে। শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এবং শিকার হয়ে ফিরে আসা দাতাদের জন্য এক ধরনের জীবনভর কষ্টের পথ তৈরি হয়।
বিশ্বব্যাপী এই কিডনি পাচার চক্রগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। তবে এই চক্রগুলো অত্যন্ত গোপনে কাজ করে, যা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই চক্রের সদস্যরা খুবই ধূর্ত এবং নিখুঁতভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে তারা আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার করে এবং বিভিন্ন দেশে নিজেদের অপকর্ম চালিয়ে যেতে পারে।
কিডনি পাচার একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা, যা মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং অসহায় মানুষের প্রতি অন্যায়ের শামিল। এই চক্রগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, যাতে অঙ্গ পাচারের মতো ভয়াবহ অপরাধ বিশ্বব্যাপী রোধ করা সম্ভব হয়। এর পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন করতে হবে, যাতে কেউ এই চক্রের শিকার না হয়।
তথ্যসূত্র: ডয়েচে ভেলে