কার ভয়ে যুদ্ধ প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:৩৫

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে একের পর এক সামরিক মহড়া চালিয়ে, নিজেদের সক্ষমতা জানান দিচ্ছে ইরান।একের পর তুলে ধরছে তাদের সমরাস্ত্রের নমুনা ভান্ডার। দেশটির সরকারি টেলিভিশনে দেখানো হয়েছে, অজানা এক এলাকায়, পাহাড়ের নীচের গোপন এক মারনাস্ত্রের সাম্রাজ্য, যেখানে দেখা যাচ্ছে হাজার হাজার বিশাল আকৃতির একেকটি ক্ষেপনাস্ত্র আর ড্রোনের বহর। যেন এক মেগা মিসাইল সিটি।
শুধু তাই নয়, খালিজ টাইমস্ তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, ইরান আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেনস্ সমৃদ্ধ মিসাইল দেখিয়ে তাঁক লাগিয়ে দিয়েছে। দেশটির ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ডস কর্পস জানিয়েছে, মহাজের সিক্স ও আবাবিল ফাইভ ড্রোনগুলি এআই নির্ভর। গার্ডসের নেভাল কমান্ডার আলী তাংসিরি জানিয়েছেন, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার এসব মিসাইল এক হাজার কিলোমিটার দুরত্বের যেকোন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। ( খালিজ টাইমস্ এর স্ক্রিন শট যাবে, ছবি যাবে মহাজের আর আবাবিলের)
এছাড়াও, ইরানের আছে, শাহাব-থ্রি ও খোরামশাহের মতো মিসাইল যা দুই হাজার কিলোমিটার রেঞ্জে আঘাত হানতে পারে। আর স্বল্প খরচে ইরানের ড্রোনের কার্যকারিতা, এরিমধ্যে দেখেছে বিশ্ব।
কিন্তু, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ক্ষেপনাস্ত্র আর ড্রোনের বিপুল অস্ত্রাগার দেখানোনে কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে ইরানের? ইরান কী নতুন কোন যুদ্ধের শংকা দেখছে?
বিশেষজ্ঞদের মত, ইরানের সামরিক মহড়া কেবল প্রতিরক্ষা সক্ষমতা প্রদর্শনের একটি কৌশল নয়, বরং এটি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তিগুলোর প্রতি একটি রাজনৈতিক বার্তাও। এটি প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি, মিত্রদের আশ্বস্ত করা, এবং অভ্যন্তরীণ শক্তি সংহত করার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। তবে ইরান কী কেবল সামরিক মহড়াই চালাচ্ছে? না পাশাপাশি অন্যকিছুও করছে?
ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার আগেই, ইরান চীনের ও রাশিয়ার সাথে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলার কাজটি এরিমধ্যে সেরে ফেলেছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেসকিয়ান, এরিমধ্যে সফর করেছেন, মার্কিন বিপরীত মেরুর দুই পরাশক্তি চীন আর রাশিয়ায়। রাশিয়ার সাথে ইরানের এমন এক চুক্তি হয়েছে যাতে, ইরান আক্রান্ত হলে প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি আছে।
এই দুই পরাশক্তির সাথে সম্পর্ক ইরানের সামরিক সক্ষমতাকে আরো শক্তিশালী করে তুলেছে।রাশিয়ার সাথে ইরান কৌশলগত এমন চুক্তি করেছে, যাতে ইস্ররাইল ইরানে হামলার বিষয়ে দশবার ভাবতে বাধ্য হয়। এই সফর ইঙ্গিত দেয় যে ইরান পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার চাপ কাটিয়ে বিকল্প পথ খুঁজছে। এটি পশ্চিমা বিশ্বের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, কারণ এই জোট আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতিকে নতুনভাবে রূপ দিচ্ছে।
এখন প্রশ্ন মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের বাইরে অন্য কোন্ শক্র ইরানকে ভয় দেখাচ্ছে?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ডের ট্রাম্পের চোখের বালি যে ইরান সেটা কারো অজানা নয়? গোল বাঁধলে ইসরাইলকে সাথে নিয়ে, ইরানের ওপর চড়াও হতে ছাড়বেন না ট্রাম্প, সেটাও জানা ইরানের। অন্যদিকে, আশংকা আছে, ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে হাতমিলিয়ে ইরানের উপর নিতে পারেন, পুরানো হামলা বদলা।
ইসরাইলের সম্ভাব্য হামলার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবেই কী, ইরানের এই মরিয়া মহড়া তৎপরতা?
ইরানের প্রতি ট্রাম্পের মনোভাব আগে থেকেই কৌশলগত ও কঠোর ছিল। তিনি ইরানকে নিয়ন্ত্রণ করতে অর্থনৈতিক চাপ, সামরিক শক্তি প্রদর্শন, এবং আঞ্চলিক মিত্রদের সাথে একযোগে কাজ করার নীতি অনুসরণ করেছিলেন। যদিও তিনি আলোচনার কথা বলেছিলেন, তার প্রশাসনের সময় ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক তিক্ততার শীর্ষে পৌঁছায়।
মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞদের ধারনা, ইরানের ওপর ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হামলার ভয় রয়েছে, বিশেষ করে যদি ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে এগিয়ে যায়। তবে কূটনৈতিক আলোচনা, আন্তর্জাতিক চাপ, এবং ইরানের সামরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা এই হামলার সম্ভাবনাকে সীমিত রাখতে পারে। ইসরাইলের আঞ্চলিক পদক্ষেপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল ইরানের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করবে। তবে, বিশেষজ্ঞদের আশংকা মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক বছরের অভিজ্ঞতায় যখন, ইরানের প্রক্সিগ্রুপগুলো পরাস্তের মুখে, তখন ইরানকে দেখে নেবার, ইসরাইল-মার্কিন বাহিনী হুমকি এখন অন্য যে কোন বারের চেয়ে সবচেয়ে বেশি।