এআই বিশ্বের হাব হবে সৌদি আরব – লক্ষ্য স্থির, বিনিয়োগ শুরু

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৫, ১২:০৬

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই) বহু মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে সৌদি আরব। ভিশন ২০৩০ কার্যকরের লক্ষ্যে এই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে সালমানের সরকার।
নিওম-এর মতো ভবিষ্যত শহর থেকে শুরু করে এআই-চালিত স্বাস্থ্যসেবা উদ্ভাবন পর্যন্ত, রাজ্যের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই দক্ষতার ঘাটতি পূরণে। এ জন্য তিনটি প্রধান কৌশল বাস্তবায়ন করা হচ্ছে: সরকার পরিচালিত নীতি, বেসরকারি খাতের উদ্ভাবন এবং শিক্ষাক্ষেত্রের প্রসার।
২০২৪ সালের গেইন (GAIN) সামিটের আগে প্রকাশিত “সৌদি আরবে এআই-এর অবস্থা” শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এআই-সংক্রান্ত চাকরির বিজ্ঞাপন বছরে প্রায় ৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০১৯ সালে, সরকার সৌদি ডাটা অ্যান্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অথরিটি (SDAIA) প্রতিষ্ঠা করে, যা জাতীয় ডাটা ও এআই কৌশল তত্ত্বাবধান করে। এর লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ২০,০০০ এআই বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষিত করা, যাতে সৌদিরা উচ্চ-দক্ষতা সম্পন্ন এআই চাকরিগুলো পূরণ করতে পারে।
২০২৪ সালে ইউনেস্কোর এক প্রতিবেদনে সৌদি আরবকে আরব বিশ্বে এআই কৌশল বিকাশে প্রথম এবং বিশ্বে ১৪তম স্থান দেওয়া হয়েছে।
এআই-তে আত্মবিশ্বাসী বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে সৌদি আরব। ২০২৫ সালের LEAP প্রযুক্তি সম্মেলনে দেশটি এআই-কেন্দ্রিক তহবিল হিসেবে ১.৭৯ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে, যা সৌদি আরবকে উদ্ভাবনের কেন্দ্রস্থল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করছে।
২০২৪ সালের গেইন সামিট রিপোর্টে দেখা গেছে, ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দেশটিতে এআই-সংক্রান্ত বিষয়ে গ্র্যাজুয়েটের সংখ্যা ৪২ শতাংশ বেড়েছে।
বর্তমানে সৌদির ৮৬ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে এআই-ফোকাসড অনার্স ডিগ্রি, ৫৬ শতাংশে মাস্টার্স প্রোগ্রাম, এবং ৯ শতাংশে পিএইচডি প্রোগ্রাম রয়েছে।
এআই শিক্ষাকে কর্মক্ষেত্রের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিং ফাহাদ ইউনিভার্সিটি অফ পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেলস ইতিমধ্যেই ফ্লেক্সিবল এআই ও ডাটা সায়েন্স মাস্টার্স ট্র্যাক চালু করেছে, এবং SDAIA দেশব্যাপী বুট ক্যাম্প পরিচালনা করছে।
কিং আব্দুল্লাহ ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (KAUST)-এর একাডেমির নির্বাহী পরিচালক সুলতান আলবারাকাতি বলেন, “KAUST অনলাইন কোর্স ও ক্লাউড রিসোর্স ব্যবহার করে সারাদেশে এআই প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।”
KAUST বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে অংশীদারিত্ব করে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে এবং শীর্ষ গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করছে।
বেসরকারি সংস্থাগুলোও এআই সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
- আলিবাবা ক্লাউড তুওয়াইক একাডেমি ও STC-এর সঙ্গে মিলে সৌদি বিশ্ববিদ্যালয়ে এআই প্রশিক্ষণ ল্যাব চালু করেছে।
- ডেটাব্রিকস আগামী পাঁচ বছরে ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
- SDAIA ও গুগল ক্লাউড ২০২৩ সালে Elevate Program চালু করেছে, যার মাধ্যমে ২০২৮ সালের মধ্যে ২৫,০০০ নারীর এআই ও মেশিন লার্নিং প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
সৌদি আরবের লক্ষ্য বিশ্বের অন্যতম এআই কেন্দ্র হয়ে ওঠা। এ জন্য সরকারি নীতি, শিক্ষাক্ষেত্রের প্রসার ও শিল্প-আধুনিকীকরণ একত্রে কাজ করছে। উচ্চমানের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সৌদি আরবের স্থানীয় প্রতিভাদের প্রস্তুত করা হচ্ছে, যা দেশটিকে প্রযুক্তির বিশ্ব মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যাবে।
তথ্যসূত্র: আরব নিউজ