Logo
×

Follow Us

উত্তর আমেরিকা

কানাডায় ওয়ার্কপ্লেস কালচার

কোন কাজ দিয়ে জীবন শুরু করবেন...

Icon

ওযায়ের ইবনে ওমর

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৫, ১০:০৮

কানাডায় ওয়ার্কপ্লেস কালচার

বিদেশ; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার মতো দেশগুলোতে পা রাখার পরপরই যে কথাটা আপনাকে বারবার শুনতে হবে তা হলো; দেশে কী করেছো বা কী ছিলে তা ভুলে যাও। সার্টিফিকেট  ছুঁড়ে ফেলে দাও। এদেশে নতুন করে শুরু করো।

তারা যে আপনাকে কটাক্ষ করে কথাগুলো বলেছে তা কিন্তু না। তারা বলতে চাইছে আপনার ডিগ্রী ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কাজ আপনি এসব দেশে পাবেন না। তাই সময় নষ্ট না করে যে কাজ পান তাতেই ঝাঁপিয়ে পড়ুন।

তবে, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি; এই কথাগুলোর মধ্যে একটু ঝামেলা আছে। আর তা হলো, আপনার অর্জিত ডিগ্রীগুলো এদেশে মোটেই ফেলনা নয়। এগুলো তাৎক্ষণিকভাবে কাজে লাগছে না। কারণ ডিগ্রী ছাড়াও আরো যেসব জিনিস জানা বা শেখা দরকার সেগুলো আপনার এখনও নেই।

 কোন কাজ দিয়ে জীবন শুরু করবেন:

কানাডায় আসার পর চেষ্টা করবেন; কাস্টমার সার্ভিস বা গ্রাহক সেবা জাতীয় কাজ দিয়ে নতুন পেশাগত জীবন শুরু করতে। এতে করে আপনার চারপাশের মানুষ, তাদের চিন্তাভাবনা, জীবন যাপন এসব সম্পর্কে দ্রুত ধারণা গড়ে উঠবে। আর পাশাপাশি ইংরেজি ভাষার চর্চাটাও হবে নিয়মিত।

সবচেয়ে ভালো হয় যদি এদেশের স্থানীয় কারোর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা কার্যালয়ে চাকরী নিতে পারেন। এতে করে আপনার পরিচয় হবে দেশটির দৈনন্দিন সংস্কৃতির সাথে। আসুন এবার জেনে নেই এসব দেশের মানুষ কাজের জায়গায় কোন বিষয়গুলো মেনে চলে…

তেল নয় বস্ খুশি কাজে:

প্রথমেই বলতে হয়; এদেশের বসদেরকে শুধু কাজ দিয়েই খুশি করা যায়; প্রশংসা করে নয়। কখনই কাজ ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে বসের প্রশংসাকে এরা ভালো চোখে দেখে না। এদেশের মানুষ অনেক স্মার্ট। তাই আপনি কাজের বাইরে কোন কথা বললেই বস ধরে নেবে আপনার ভিন্ন কোন মতলব আছে বা আপনি কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন। কাজের জায়গায় বা কাজের সময় কাজ ছাড়া অন্য যে কোন কিছু করা বা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে।

 দুর্নামমুক্ত কর্মস্থল:

কখনই কারো বিষয়ে দুর্নাম করা যাবে না। রাজনীতির আলাপ তো নয়ই। কোন কারণে যদি আপনি আপনার সহকর্মীর বিরুদ্ধে কোন বাজে মন্তব্য করেন, তাহলে আপনার চাকরী চলে যেতে পারে। তবে কোন সহকর্মীর কাজে গাফিলতি বা ভিন্ন কোন ক্রটি চোখে পড়লে বা কোন সহকর্মীর বিষয়ে আপনার নালিশ থাকলে তা বসকে একান্তে জানানো যায়।

নয়টা মানে পৌনে নয়টা:

এদেশে সবাই সাধারণত কাজ শুরুর দশ থেকে পনের মিনিট আগে কর্মস্থলে আসে। নয়টায় কাজ শুরুর কথা হলে কেউ যদি ঠিক নয়টায় অফিসে ঢোকে তাহলেও তাকে লেট ধরা হয়। আর পরপর তিনদিন যদি কেউ লেট করে, বস চাইলে তাকে ফায়ার করে দিতে পারে বা করে দেয়।

কাজে সময়ানুবর্তিতা এদেশে সবার জন্য প্রযোজ্য। এমনকি অফিসের বসও যদি প্রায়ই লেট করে, তাহলে অন্যরা তার বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারে।  

কর্মস্থলে নারীর মর্যাদা:

নারী সহকর্মী বা সেবাগ্রহীতাদের বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা। আপনার কথা, অভিব্যক্তি বা দৃষ্টি এসবের কোন কিছুর বিষয়ে, কোন নারী বা সেবাগ্রহীতা যদি অসম্মান বোধ করেন; তাহলে চাকরী তো হারাবেনই, জেল জরিমানাও হতে পারে।

অযথা বসে থাকা বারণ:

কাজের সময় সবসময় ব্যস্ত থাকতে হবে কাজে। ধরুন আপনার কাজ পিজা ডেলিভারি দেয়া। এমন হলো যে হাতে কোন অর্ডার নেই। তাই বলে আপনি বসে থাকতে পারবেন না। আপনাকে কিচেন বা রেস্টুরেন্টে সহকর্মীদের সাহায্য করতে হবে। তেমন কোন কাজ না থাকলে ওয়াশরুম পরিষ্কার করতে হবে। ওয়াশরুম পরিষ্কার করা এদেশে খুবই প্রশংসনীয় কাজ। এই কাজটা সাধারণত ম্যানেজার বা বসরা করে থাকে।

হতে হবে ভালো মানুষ: 

মোটের উপর আপনাকে ভালো মানুষ হতে হবে। এরা ভালো মানুষদের বলে, নাইস পারসন। কেউ যেন আপনার কথায়, কাজে বা আচরণে কষ্ট না পায় সেদিকে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে। আপনি সবসময় তেমন ব্যবহার অন্যের সাথে করবেন, আপনি অন্যের কাছ থেকে ঠিক যেমন ব্যবহার আশা করেন। এদেশে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে এরা ভালো মানুষ বা নাইস পারসন খোঁজে, তেলবাজ নয়।

পাল্টাতে হবে নিজেকে:

মোটাদাগে এই হলো উত্তর আমেরিকা তথা কানাডায় কাজের বা পেশাগত সংস্কৃতি, যাকে ইংরেজিতে বলে, ওয়ার্কপ্লেস কালচার।

সত্যি কথা বলতে কী, তৃতীয় বিশ্বের অধিবাসী হিসেবে আমাদের এসব গুণের প্রায় কোনটাই নেই। যেমন, আমারা কাজে হয় বসদের খুশী করতে ব্যস্ত থাকি নয় ভিন্নকিছুতে। সহকর্মীদের নিয়ে পরনিন্দা পেশাগত জীবনের অংশ। আমরা নয়টা মানে বুঝি সাড়ে নয়টা। আর নারীদের বিষয়ে আমাদের মনোভাব আর নাই বললাম!

আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলি, যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডায় এসে মূলধারায় কাজ পেতে হলে নিজেকে আমূল পাল্টাতে হবে। যে গুণগুলোর কথা বলেছি সেগুলোকে অভ্যাসের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। আর নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী চাকরী বা কাজের সুযোগ খুঁজে যেতে হবে।

সফলতার গোপন সূত্র:

মনে রাখবেন, এদেশে সবাই শিক্ষিত। কিন্তু উচ্চ শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা খুবই কম। যেসব কাজে ডিগ্রীধারী লোক দরকার সেগুলোতে এরা সহজে কর্মী খুঁজে পায় না। আপনার যেহেতু ডিগ্রী আছে তাই শুধু দরকার এদেশের কাজের সংস্কৃতি আর ইংরেজি ভাষাটা ঠিকঠাক মতো রপ্ত করা। তাহলে পেশাগত জীবনে সফলতা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

লেখক পরিচিতি: সাংবাদিক ওযায়ের ইবনে ওমর বর্তমানে ক‍ানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। বাংলাদেশে তিনি এনটিভিতে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। 

Logo