ডারিয়েন গ্যাপ: পৃথিবীর ভয়ংকরতম মানব পাচার রুট!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪২

কলম্বিয়া ও পানামার মধ্যবর্তী ১৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ডারিয়েন গ্যাপ জঙ্গলটি বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক অভিবাসনপথ হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছর হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী এই রুটটি পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তবে এই যাত্রা শুধুই শারীরিক নয়; মানসিক ও সামাজিকভাবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
প্রতি মাসে অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা ও মৃত্যুর হার:
২০২৪ সালের প্রথম ৯ মাসে প্রায় ৪ লাখ ২ হাজার অভিবাসী ডারিয়েন গ্যাপ পাড়ি দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছিলেন ভেনেজুয়েলা, হাইতি, ইকুয়েডর, চীন, আফগানিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল ও ক্যামেরুনের নাগরিক। এই রুটে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ২৫ হাজার ৪৩১ শিশু-কিশোর পানামায় প্রবেশ করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আট গুণ বেশি। তবে কতজন অভিবাসী এই পথে প্রাণ হারিয়েছেন, সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য নেই।
দালাল চক্রের কার্যক্রম:
অভিবাসনপ্রত্যাশীরা সাধারণত দালালের মাধ্যমে এই বিপজ্জনক পথে যাত্রা করেন। দালালরা তাদের প্রথমে দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে নিয়ে যায়। যেমন ব্রাজিল বা ইকুয়েডর, যেখানে ভিসা সহজলভ্য। এরপর তারা কলম্বিয়া হয়ে ডারিয়েন গ্যাপ পাড়ি দিতে সহায়তা করে। এই যাত্রায় দালালরা প্রায়ই অতিরিক্ত অর্থ দাবি করে এবং যাত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে কোনো দায়িত্ব নেয় না।
সামাজিক ও মানবিক প্রভাব:
ডারিয়েন গ্যাপ পাড়ি দেওয়ার সময় অভিবাসীরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অপরাধী চক্র, খাদ্য ও পানির অভাব এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের সম্মুখীন হন। বিশেষ করে শিশু ও নারীরা যৌন হয়রানি ও পাচারের শিকার হন। এই অভিবাসনপ্রবণতা দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর জন্য একটি বড় মানবিক সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক পরিস্থিতি:
তবে ২০২৫ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন আশ্রয় নীতিতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পর এই অঞ্চলে অভিবাসী প্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পানামার ভিলা ক্যালেটা শহরের স্থানীয় অর্থনীতি ধসে পড়েছে।
মাইগ্রেশন-সংক্রান্ত ব্যবসা থেকে লাভ করা অর্থ দিয়ে স্থানীয়রা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছিল। যেমন বাড়ি সংস্কার, বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন এবং শিক্ষার খরচ মেটানো। কিন্তু অভিবাসী প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় এই আয়ের উৎসও বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে আবার কৃষিকাজে ফিরে গেছে বা স্বর্ণখনি খননসহ অনিশ্চিত বিকল্পে জড়িয়ে পড়েছে। খালি ক্যাম্প, পরিত্যক্ত বন্দর এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্যবসা এই অর্থনৈতিক মন্দার চিত্র তুলে ধরছে।
ডারিয়েন গ্যাপ পাড়ি দেওয়া অভিবাসীদের জন্য একটি মৃত্যুপথের যাত্রা। এই পথে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা উন্নত জীবনের আশায় প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা করেন। তাদের এই যাত্রা শুধু একটি সীমান্ত পাড়ি দেওয়া নয়, বরং মানবিকতা, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের প্রশ্নও উত্থাপন করে।
তথ্যসূত্র: এপি, এআই