Logo
×

Follow Us

মতামত

বিশেষ সাক্ষাৎকারে ড. নূরুল ইসলাম

দক্ষ শ্রমিক বিদেশ গেলে পজেটিভ ব্র্যান্ডিং হবে বাংলাদেশের

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ২০:৩২

দক্ষ শ্রমিক বিদেশ গেলে পজেটিভ ব্র্যান্ডিং হবে বাংলাদেশের

ড. মো. নুরুল ইসলাম, বিএমইটির সাবেক ডিরেক্টর। অভিবাসন ও দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে প্রশিক্ষণ বিষয়ে রয়েছে তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রজেক্টে টিভিইটি স্পেশালিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। কাজ করেছেন বিদেশি দূতাবাসেও। জনশক্তি রপ্তানি, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সরকার ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কাজ নিয়ে দীর্ঘ মতামত দিয়েছেন মাইগ্রেশন কনসার্নকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহবুব স্মারক। দুই পর্বের ধারাবাহিকের শেষ পর্ব 

মাইগ্রেশন কনসার্ন : ড. নুরুল ইসলাম আপনাকে স্বাগত। আপনি বিদেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর ব্যাপারে বহুবার বহু মাধ্যমে বলে আসছেন। এখন দক্ষ শ্রমিক যদি আমরা পাঠাতে পারি, তবে কোন কোন জায়গায় মূলত পরিবর্তন আসবে? এতে রেমিট্যান্স কি বাড়বে? 

আপনাকে ধন্যবাদ। রেমিট্যান্সের কথায় আমি পরে আসতে চাই। প্রথমত দরকার বিদেশে আমাদের ইমেজের পরিবর্তন ঘটানো। বাংলাদেশের একটা সঠিক ব্র্যান্ডিংয়ে আসা দরকার। বাংলাদেশ থেকে কেবল ক্লিনার যায়, হেলপার যায়, লেবার যায়; এই ব্র্যান্ডিংটাই পরিবর্তন করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে কিন্তু অনেক ভালো ওয়েল্ডার তৈরি হয়, আইটি স্পেশালিস্ট তৈরি হচ্ছে এখন- বিভিন্ন সেক্টরে কিন্তু বাংলাদেশের ওয়ার্কাররা ভালো কাজ করে। আমাদের আসলে সেই ব্র্যান্ডিংটাই হয়ে যাওয়া দরকার, যে বাংলাদেশ থেকে ভালো ওয়ার্কার তৈরি হয়। ফলে যে ইমেজটা তৈরি হবে, তখন বাংলাদেশিরা বিদেশে গিয়ে ভালো কর্মপরিবেশ পাবে, তাদের সম্মান বৃদ্ধি পাবে। এটা সবচেয়ে বড় ব্যাপার। আমি রেমিট্যান্সকে ৩ নম্বরে নিয়ে আসব। 

তার আগে দুই নম্বরটা হলো, তারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়া বা ন্যায্য মজুরি না পাওয়ার বহু সমস্যা নিয়ে আমাদের দূতাবাসগুলোতে তারা যান। আমি নিজে একসময় বিদেশে দূতাবাসে কাজ করে দেখেছি, এ ধরনের সমস্যা নিয়ে অদক্ষ শ্রমিকরাই বেশি আসেন। সেই তুলনায় দক্ষ শ্রমিকের এ রকম সমস্যা প্রায় নাই! এর অর্থ, এ ধরনের সমস্যার উত্তরণ আমরা সহজেই ঘটাতে পারব শুধু দক্ষতা বাড়িয়েই। বাকিটা এমনিতেই উন্নতি ঘটবে। 

আর তিন নম্বরে যদি আসি রেমিট্যান্স প্রসঙ্গে, তাদের বেতন অনেক বাড়বে যদি তারা দক্ষ হয়। সেই দেশে তাদের সামাজিক অবস্থানও অনেক উন্নত হবে। ফলে তারা টাকা বেশি পাঠাতে পারবে দেশে। সুতরাং, এই তিনটি প্রত্যক্ষ উপকার আমরা পাবো যদি দক্ষ জনশক্তি আমরা বাংলাদেশ থেকে পাঠাই। 

মাইগ্রেশন কনসার্ন : বাংলাদেশ সরকার তো এর জন্যে ব্যবস্থা করেছে অনেক আগে থেকেই। বিএ্মইটির পরিচালনায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা টিটিসিগুলোর মাধ্যমে তো এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে সারাদেশেই। এখন এই টিটিসিগুলো সঠিক ভূমিকা রাখতে পারছে কি? 

এখন ১১০টি টিটিসি আছে, আরো ৫০টি বাড়ানোর কাজ চলছে। মানে ১৬০টি হয়ে যাবে। কিন্তু এখানে আমাদের জনবল, প্রশিক্ষক প্রায় ৫০ ভাগও নেই। এমনকি নতুন যেগুলো হয়েছে, সেখানে প্রায় শতকরা ১০ ভাগও নেই। এখন শিক্ষক না থাকলে আপনি কীভাবে শিক্ষা দেবেন? কিছু কিছু জায়গায় আছে যন্ত্রপাতির সংকট। বিশেষ করে আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। 

কেবল সংখ্যা বাড়ালে বা কাঠামোগত বৃদ্ধি ঘটালেই তো হচ্ছে না। তবে কাঠামো বাড়ানোর একটি ইতিবাচক বিষয় হলো, এটিকে এরপর আস্তে আস্তে উন্নত করা যায়। এই মুহূর্তে যে দুটি বিষয় দরকার, তা হলো প্রশিক্ষক দিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দিতে হবে। 

মাইগ্রেশন কনসার্ন : যোগ্য এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষকের অভাব এবং প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতির সংকট টিটিসিগুলোতে, যেটি আপনি আগেও বলেছেন। কিন্ত কেবল এই দুটি বিষয়েই কি ঘাটতি?

না। এর বাইরে গিয়ে ‘টার্গেটেড ট্রেনিং’ দিতে হবে। ‘জেনেরিক ট্রেনিং’ করালে হবে না। বিভিন্ন দেশ বা অঞ্চলকে বিবেচনা করতে হবে, কোথায় কেমন শ্রম শক্তি দরকার। যেমন সৌদি আরব বা মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর বা ইউরোপীয় দেশগুলোতে কেমন চাহিদা- এভাবে বিবেচনা করে ‘টার্গেট’ ঠিক করতে হবে। সুতরাং ‘নিড অ্যাসেসমেন্ট’ করে ট্রেনিংগুলো দিলে টিটিসিগুলো খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। যেহেতু ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা কাঠামো হয়ে গেছে, এখন কেবল বাকি বিষয়গুলোকে যদি সঠিক পরিকল্পনায় সাজানো যায়, তাহলে এটি বিশাল অবদান রাখতে পারবে আমাদের স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে। 

মাইগ্রেশন কনসার্ন : এই বিবেচনায় সবচেয়ে বড় সংকট কী হতে পারে আগামীর জন্য? কোথায় নজর দেওয়া জরুরি?

সংকট যেটি দেখতে পাই সেটি হলো আমাদের ‘মানসিকতা’। আমরা যদি মনে করি এভাবে গতানুগতিকভাবেই এগিয়ে যাব, তাহলে আমাদের সংকট থাকবেই। একটা ‘ডায়নামিক মেন্টালিটি’ নিয়ে যদি এই সেক্টরে আমরা পরিকল্পনা করি, তবে সেই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

মাইগ্রেশন কনসার্ন : শুধু কি সংকটই থাকবে? এই সেক্টরে ভবিষ্যতের জন্য আপনি সম্ভাবনার জায়গা কোনটি দেখেন?

আপনি জানেন যে আমরা এখন ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ এনজয় করছি। মানে আমাদের কর্মক্ষম জনসংখ্যার পরিমাণ বেশি। এটা ২০৩০ সাল পর্যন্ত স্বতঃস্ফূর্তভাবে চলবে। এরপর একটু একটু করে এই হার কমলেও ২০৪০ সাল পর্যন্ত আমরা এই সুযোগকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারব। এখনই সময় তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগানোর। এই তরুণদের যদি আমরা ‘দক্ষ’ করে তুলতে পারি দেশ ও বিদেশের চাহিদা অনুযায়ী, সেটিই হলো আমাদের সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা। প্রযুক্তিগত এবং আধুনিক বিশ্বের চাহিদা বুঝে আমরা যদি আমাদের তরুণ সমাজকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে পাঠাতে পারি, তাহলে আমাদের এই রেমিট্যান্সকে ৩ গুণ করে তোলা কোনো ব্যাপারই না! এটিই আমাদের সবচেয়ে বড় সুযোগ।

মাইগ্রেশন কনসার্ন : আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য!

আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। ধন্যবাদ মাইগ্রেশন কনসার্নকে। এমন জরুরি বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্যে।

Logo