ভয় শব্দটি যথেষ্ট নয়, গাজায় শিশুদের কান্নায় স্তব্ধ মানবতা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৬

চার বছর বয়সী একটি শিশু ঘুমাতে যাওয়ার আগে জিজ্ঞেস করে, “আমরা ঘুমিয়ে থাকলে যদি মরে যাই… ব্যথা লাগবে?”
এই একটি প্রশ্নেই যেন আটকে আছে পুরো গাজার বর্তমান বাস্তবতা।
বোমার শব্দ, ধুলোর কুয়াশা, গন্ধে ভেসে থাকা রক্ত; এগুলো এখন গাজার মানুষের প্রতিদিনের সঙ্গী। তিন সপ্তাহ আগে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে এই ফিলিস্তিনি উপত্যকা পরিণত হয়েছে এক নিষ্ঠুর যুদ্ধক্ষেত্রে, যেখানে মৃত্যু আর ধ্বংসের কোনো সীমা নেই।
শিশুদের শৈশব ছিন্নভিন্ন
"আমার ১২ জন ভাগনে-ভাগনি। সবাই ৯ বছরের নিচে। তারা আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অংশ ছিল," বলছিলেন একজন ফিলিস্তিনি লেখক ও সাংবাদিক, যিনি এই দুঃসময়েও প্রতিদিন লিখে চলেছেন।
“কিন্তু এখন, আমি তাদের চোখে ভয় দেখি। তারা বুঝে গেছে আমরা মিথ্যা বলি। তারা আমাদের চোখে দেখতে পায় সেই আতঙ্ক, যা আমরা লুকাতে পারি না।”
গাজার শিশুরা এখন আর খেলনা নিয়ে খেলে না, খেলে রাবারের বোমার খোসা দিয়ে। তাদের গল্প এখন স্কুল নয়, বোমাশ্রয়। রাতে ঘুম নয়, বরং একটি নিরাপদ মৃত্যুর আশ্রয়।
পরিসংখ্যান বলছে: গাজা ধ্বংসের পথে
গত তিন সপ্তাহে নিহত হয়েছে ১,৪০০-এর বেশি মানুষ, যাদের মধ্যে কয়েকশ শিশু।
৩০ জনের বেশি নিহত হয়েছে দার আল-আরকাম স্কুলে, যেখানে তারা আশ্রয় নিয়েছিল।
জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্পে একটি ক্লিনিকের উপর হামলায় অগণিত বেসামরিক মানুষ পুড়ে মারা গেছেন, শিশুদের দেহাংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল চারপাশে।
“সরতে বললে কোথায় যাব?”
ইসরায়েলি বাহিনীর বারবার সরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ বাস্তবে অসম্ভব।
উত্তর ধ্বংস, দক্ষিণ অচল। সমুদ্র অবরুদ্ধ, সড়ক মাইনপাতা।
“আমরা কোথায় যাব? আমরা থাকছি কারণ আমাদের যাওয়ার জায়গা নেই,” বলছিলেন এক মা, যিনি তার দুই শিশুকে হারিয়েছেন।
লেখার মধ্যেই জীবনের শেষ আলোর খোঁজ
এই যুদ্ধের মাঝেই এক লেখক দিনের পর দিন লিখে যাচ্ছেন। নিজের চারপাশের মৃত্যু, ধ্বংস, কান্না, ভয়— সব কিছুই লিপিবদ্ধ করছেন।
“আমি লিখি কারণ আমি চাই কেউ জানুক আমরা কী পার করছি। আমি লিখি যাতে একদিন ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকে— আমরা কথা বলেছিলাম। আমরা নীরব ছিলাম না।”
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা