সাক্ষাৎকারে ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট কাউসার খান
অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী হতে চাইলে প্রস্তুতি নিতে হবে আগে থেকে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৪৩

কাউসার খান অস্ট্রেলিয়ার সিডনীর ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট ও সাংবাদিক।দৈনিক প্রথম আলোর সিডনী প্রতিনিধি। অস্ট্রেলিয়ায় ইমিগ্রেশন, দেশটিতে থাকা বাংলাদেশীদের কার্যক্রম নিয়ে তাঁর লেখালেখির সাথে সুপরিচিত দেশের মানুষ। অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশন, দেশটিতে স্টুডেন্টদের ভিসা কেন কমছে, কেন স্টুডেন্টদের ভিসায় যাচাই বাছাই বেশি হচ্ছে, বিজনেস মাইগ্রেশন কেন প্রায় বন্ধের পথে, কেন ভিজিটর ভিসা কমছে, পড়াশোনা করে কীভাবে দেশটিতে স্থায়ী হওয়া যায়, স্কিলড ইন ডিমান্ড ভিসায় বাংলাদেশ থেকে কাদের পিআর পাবার সুযোগ আছে ইত্যাদি নানান বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন মাইগ্রেশন কনসার্নের সাথে। কাউসার খানের ইন্টারভিউ নিয়েছেন মাহবুব স্মারক। চার পর্বের ধারাবাহিকের এটি দ্বিতীয় পর্ব
মাইগ্রেশন কনসার্ন: অনেক পড়াশোনার উদ্দেশ্য যান অস্ট্রেলিয়া। সেখানে গিয়ে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি চান। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকেই কীভাবে প্রস্তুতি নেয়া দরকার.. আরেকটু বিস্তারিত যদি বলেন… যেমন ধরেন কেউ বিবিএ পড়তে চান কিন্তু অস্ট্রেলিয়া বিবিএ তে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির স্কোপ নাই। কিন্তু অনেক সাবজেক্ট আছে যেগুলো পিআরের তালিকায় ওপরের দিকে…কিন্তু সেই সাবজেক্ট তার পছন্দ না। তাহলে সে কীভাবে সিদ্ধান্ত নেবে?
কাউসার খান: আমি আমার নিজের উদাহরণ দিয়ে বলি, আমার নিজের কিছু আত্নীয় স্বজন আছে তারা এদেশে আসতে চায়। এসে তারা বলবে যে তারা এদেশে বিবিএ এ্যাকাউন্টিং পড়ছে। শিক্ষার্থীদের বাবা মাও একটু প্রাউন্ড ফিল করবে। তবে এটা বাস্তবতা না। বাস্তবতা হচ্ছে এখানে যত দ্রুত পার্মানেন্ট রেসিডেন্স হয়ে যেতে পারে পড়াশোনা করে, তারপর কিন্তু সরকারের বা ইউনিভার্সিটি থেকে ফান্ড পাওয়া যায় ফারদার পড়াশোনার জন্য। তখন তিনি তার মনমর্জি অনুযায়ী পড়াশোনা করতে পারেন। সেই পড়াশোনা করে তিনি বড় কিছু হতে পারেন। তার আগে কেউ যদি টেকনিক্যালি পার্মানেন্ট রেসিডেন্স হতে চান কেউ তাহলে আমার পরামর্শ পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির যে লিস্ট থাকে, এটা অনেক বড় লিস্ট।
মাইগ্রেশন কনসার্ন: তার মানে কোন কোন সাবজেক্ট পড়লে ভবিষতে পিআর পাওয়া সুবিধার হবে স্টুডেন্টদের?
কাউসার খান: যেমন সাইবার সিকিউরিটি খুব ভালো সাবজেক্ট, নার্সিং খুব ভালো সাবজেক্ট। এদেশে নার্সদের শর্টেজ আছে। সেটা পড়তে পারে। ট্রেড রিলিটেড অনেক সাবজেক্ট আছে যেমন ট্রিপল ই যেটা। এগুলো অনেক ভালো সাবজেক্ট। অস্ট্রেলিয়ায় সেটেলমেন্টের জন্য ভালো সুযোগ আছে। ট্রেড, হেল্থ কেয়ারের সাবজেক্ট, এইজ কেয়ার সাবজেক্ট তারপর আইটি। এসব পড়া উচিত কারণ আইটির বিশাল জগৎ এখন। সারা পৃথিবী জুড়েই চলছে তাদের দাপট। তার বাইরে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ওপর সাবজেক্ট আছে। এসব পড়লে কিন্তু যেকেউ ভালো করবে গড়পরতায় এটাই আমি বলতে পারি।
এর বাইরেও প্রচুর লিস্ট আছে যা homeaffairs.com.au বা homeaffairs.gov.com.au গেলে প্রচুর তথ্য আছে। সেটা নিজের মতো ঘেঁটে দেখতে পারে যে কেউ।
মাইগ্রেশন কনসার্ন: তার মানে যদি কেউ নিখাঁদ পড়াশোনা করতে চায় সেটি এক বিষয় তাহলে তাকে দেশে ফিরতে হবে। কিন্তু কেউ যদি অস্ট্রেলিয়ায় যায় এবং দেশটিতে থেকে যেতে চায় তাহলে সেভাবেই তার প্রস্তুতি নেয়া উচিৎ।
কাউসার খান: ঠিক। সেক্ষেত্রে মানসিকভাবেও প্রস্তুতি নেয়া উচিৎ। এমন শুনি যে বাংলাদেশ থেকে যারা আসেন, যারা গ্লাসে পানি ভরেও খায় না। এটা কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় হবে না। এখানে কিন্তু ১৪ বছর থেকেই ছেলেমেয়েরা কাজ করতে শুরু করে। কঠিন পরিশ্রম করতে শুরু করে। পড়াশোনার পাশাপাশি দুইটাই করতে হয়। এখানে জীবন এতো এক্সপেনসিভ যে বাংলাদেশের আরামের লাইফ যেনো কেউ এক্সপেক্ট না করে। এখান এসে যেন কাজ করে। কি কি কাজ করতে হয় সেটা যেন মনে রেখে প্রিপারেশন নেয়। আমি তো সবাইকে বলি যে মহাত্মা গান্ধিও তো বিদেশে রেস্টুরেন্টে কাজ করেছে। এই বয়সটাই কাজ শেখার সময়। কাজ করে বাংলাদেশে মা বাবাকে হেল্প করা, যাতে তাদের ওপর বেশি প্রেসার না পরে সেই প্রিপারেশনটা থাকা উচিৎ। যে কোন কাজ যেনো এখানে এসে করতে পারে সেই প্রিপারেশনটা থাকা উচিৎ। বাংলাদেশ থেকে আসার সময় থেকেই এটা জেনে বুঝে আসা দরকার।
মাইগ্রেশন কনসার্ন: অনেকে আবার কাজ করতে গিয়ে বা ডলার ইনকামের মজায় পড়াশোনার ক্ষতি করে ফেলে তাতে কেমন বিপদ হতে পারে?
কাউসার খান: বিশাল বিপদ। বিশাল বিপদ। প্রচুর ছেলে মেয়ে প্রথম দিকে এমনটা করে। এসেই কাজে লেগে যায়। পড়াশোনার দিকে খেয়াল করে না। অনেকের ইউনিভার্সিটির টিউশন ফিস সম্পর্কে ধারনা নাই। এক সেমিস্টারের টিউশন ফিস দিয়ে চলে আসার পর, পরে সেমিস্টারের টিউশন ফিসের এরেঞ্জের কোন ধারনা থাকে না। তারপর ইয়ার ড্রপ করে। তারপর ছোট কলেজে চলে যায়। এরপর ভিসার যে কন্ডিশন থাকে সেগুলো ব্রিচ করে।
মাইগ্রেশন কনসার্ন: ভিসা কন্ডিশন ব্রিচ হলে কেমন বিপদ হতে পারে শিক্ষার্থীদের?
কাউসার খান: এসব করে লাইফটাকে একদম ম্যাসাকার করে ফেলে। আমার কাছে এমন প্রচুর স্টুডেন্ট আসে। একদম শেষ মুহূর্তে আসে যখন আর করার কিছু থাকে না। তাকে বাংলাদেশে ব্যাক করতে হয়। তখন বিশাল হতাশা নিয়ে চলে যায়। না সে ঘাটকা না সে ঘরকা হয়ে সে তালগোল পাকিয়ে ফেলে। এ জন্য বলি যত পয়সাওয়ালা মানুষের সন্তানই হোক, কাজ করুক বা না করুক, সে যেন তার পড়াশোনার ক্ষতি না করে। কমপক্ষে এখানকার একটা ডিগ্রি যেন সে নেয়। একটা সার্টিফিকেট যেন তার থাকে। তাহলে পৃথিবীর যে দেশেই সে যাক না কেন তার একটা মূল্যায়ন হয়। পড়াশোনা করলে সে দুনিয়ার কোথাও তার চ্যালেঞ্জ নিতে কোনো ভয় পাবে না। অস্ট্রেলিয়াতেই থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই। পৃথিবীর যে কোনো দেশে সে চ্যালেঞ্জ নিতে পারবে। এমনকি বাংলাদেশে ফিরে গিয়েও সে ভালো কাজ করতে পারবে। আমি বলব, অস্ট্রেলিয়ায় আসবে সে অবশ্যই ভালো স্টাডি করে আসবে। ফুল প্রিপারেশন নিয়ে আসবে। অস্ট্রেলিয়ায় এসে যেন সে মনে না করে যে, ভুল করে ফেলেছে। কারণ শুধু কাজ করে এখানে টিউশন ফি বা জীবন ধারণ করা যায় না।
চলবে….