সাক্ষাৎকারে ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট কাউসার খান
অস্ট্রেলিয়ায় বিজনেস মাইগ্রেশন এক প্রকার বন্ধ!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:১৪

কাউসার খান অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট ও সাংবাদিক। দৈনিক প্রথম আলোর সিডনি প্রতিনিধি। অস্ট্রেলিয়ায় ইমিগ্রেশন, দেশটিতে থাকা বাংলাদেশিদের কার্যক্রম নিয়ে তার লেখালেখির সাথে সুপরিচিত দেশের মানুষ। অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশন, দেশটিতে স্টুডেন্টদের ভিসা কেন কমছে, কেন স্টুডেন্টদের ভিসায় যাচাই-বাছাই বেশি হচ্ছে, বিজনেস মাইগ্রেশন কেন প্রায় বন্ধের পথে, কেন ভিজিটর ভিসা কমছে, পড়াশোনা করে কীভাবে দেশটিতে স্থায়ী হওয়া যায়, স্কিলড ইন ডিমান্ড ভিসায় বাংলাদেশ থেকে কাদের পিআর পাওয়ার সুযোগ আছে ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন মাইগ্রেশন কনসার্নের সাথে। কাউসার খানের ইন্টারভিউ নিয়েছেন মাহবুব স্মারক। চার পর্বের ধারাবাহিকের এটি ৩ পর্ব
মাইগ্রেশন কনসার্ন: অস্ট্রেলিয়া কি ভিজিটর ভিসা কমিয়ে দিচ্ছে? বিজনেস ভিসায়ও কি লোক নেয়া কমাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া? কী ধরনের ট্রেন্ড চলছে?
কাউসার খান: প্রতিটি দেশ চায় যে ভিজিটররা এসে ঘুরে নিজ দেশে চলে যান। এটা টাইম টু টাইম এটা ভেরি করে। আপনি দেখবেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক আন্দোলন, সরকার পতন এবং এখনো যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে, তার ফলে সামগ্রিক যে পরিবর্তন হয়েছে, তাতে হয়েছে কী, অস্ট্রেলিয়া ফিল করছে যে, বাংলাদেশে থেকে অস্ট্রেলিয়ায় এসে থেকে যেতে যাওয়ার চান্স বেশি। যদি জেন্যুইন ভিজিটর হয়, তাহলে অবশ্যই ভিসা দেয়। তারপরও ইন্টারনাল এ দেশের একটা ক্রাইটেরিয়া সেটআপ করা আছে যে ২০-৪০ বছরের একটা ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় বেশি থেকে যায়। আবার যদি কারো রিলেটিভস থাকে, তাদের বাংলাদেশে যদি কেউ না থাকে তাহলেও থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটা আসলে তাদের একটা সিস্টেম করা আছে। আপনি নিজেও থেকে গেছেন ফলে জানেন যে তারা অস্ট্রেলিয়া প্রতি বছর তাদের কান্ট্রি আপডেট করে প্রতি বছর, প্রতিক্ষণ। সারাক্ষণ তারা এসব পর্যালোচনা করতে থাকে।
মাইগ্রেশন কনসার্ন: কিন্তু যারা জেন্যুইন ভিজিটর, তাদের ভিসা কি হচ্ছে আসলে?
কাউসার খান: জেন্যুইন ভিজিটরদের তারা কখনোই ফেরায় না। প্রচুর ভিজিটর ভিসা তারা দিচ্ছে। কিন্তু এটাও ঠিক, তাদের কাছে পরিষ্কার পরিসংখ্যান আছে যে, কতজন থেকে যাচ্ছে আবার কতজন চলে যাচ্ছে। যখন থেকে যাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়, বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার চান্সেস কম থাকে, তখন তারা এই ডিসিশনটা নেয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুব যে কম ভিসা দিচ্ছে তাও নয়। কিন্তু এখন যারা অ্যাপ্লাই করতেছে, এরাই আসলে যে ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল করা দরকার, সেই ক্রাইটেরিয়া বা এলজিবিলিটি সিস্টেমের মধ্যে পড়ে না।
মাইগ্রেশন কনসার্ন: আমেরিকায় গিয়ে অনেকে থেকে যায়, পরে নানা কায়দা-কানুন করে স্থায়ী হতে পারার ঘটনাও আমরা দেখি। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বেলায় কি সেটা সম্ভব? মানে ভিজিটর হিসেবে গিয়ে থেকে যাওয়া সম্ভব? কোনো সুযোগ আছে?
কাউসার খান: অস্ট্রেলিয়ায় অবৈধ বলে কোন শব্দই নাই। সুযোগই নাই। ভিজিটর ভিসা থেকে তাকে অন্য কোনো ভিসায় অ্যাপ্লাই করতে হবে। ইলিগাল থাকার চান্স খুব কম। কারণ সব কিছু এখানে মনিটর হয় এবং তারা খুব ভালো করেই জানে, কোথায় কে আছে এবং এড্রেস সব কিছু। আপনি থেকে গেছেন তো আপনি জানেন যে কাউকে ট্রেস করা কত সহজ। ফলে এখানে ইলিগাল বলে কিছু নাই। ভিজিটর এসে অ্যাসাইলাম কিংবা অন্য কোনো ভিসায় অ্যাপ্লাই করে কিছু দিন থাকতে পারে কিন্তু ভিসা জেন্যুইন না হলে থেকে যাওয়ার চান্স খুবই কম। কিছু যে এক্সেপশন যে নাই তা না। সে জন্য আমি কাউকে উৎসাহিত করি না যে ভিজিটর হিসেবে এখানে এসে থেকে যাবেন। এই পরিকল্পনা একদম মাথা থেকে ফেলে দিতে হবে।
মাইগ্রেশন কনসার্ন: বিজনেস মাইগ্রেশন কি একেবারে বন্ধই করে দেবে অস্ট্রেলিয়া?
কাউসার খান: বিজনেস মাইগ্রেশন যেটা আগে ছিল সত্যি কথা। এগুলো আসলে আগে প্রভিশন ও পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি ছিল, সেটা দেশটির লেবার গভর্নমেন্ট আসার পর এই বিজনেস মাইগ্রেশন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে এই ফিল্ডে হয়তো বা কম এপ্লাই করেছে এলিজিবল হয়েছে। কিন্তু কিছু দেশ আছে যেমন চীন যাদের সামর্থ্য ছিল ইনিশিয়ালি চলে আসার। এই শর্তটা ছিল যে এখানে তিন বছর থেকে বিজনেস করতে হবে। কিন্তু পরে দেখা গেল যে প্রচুর পরিমাণ এ দেশে এসেও তারা কন্টিনিউ করতে পারে নাই। এটা এখন এক প্রকার ক্লোজ করে দিয়েছে।
মাইগ্রেশন কনসার্ন: এটার পরিবর্তে নতুন কোনো ভিসা ক্যাটাগরি কি চালু হয়েছে? সেটার শর্ত কেমন?
কাউসার খান: এটার পরিবর্তে ইনোভেশন নামে একটা ভিসা ক্যাটাগরি করেছে। কিন্তু সেটাতে অনেক কঠিন সব শর্ত আছে। অস্ট্রেলিয়াতে বিজনেস ভিসাতে আর হচ্ছে না। এখনো যদি কেউ ধারণা দেয়, ভিসা অ্যাপ্লাই করা যায়, সেটা বলতে পারে কিন্তু ভিসা অ্যাপ্লাই করা আর ভিসা পাওয়া তো এক কথা না। বাংলাদেশ থেকে অনেক বিজনেসম্যান আছে যারা অ্যাপ্লাই করে তাদের কাছে অনেক টাকা ফি নেয়া হয়, দিনের পর দিন ঘুরতে থাকে। তারপর অনেক দিন পর সে নিজেই হতাশ হয়ে যায়। পরে বলে আমি আর আসব না। আমি বলব, অস্ট্রেলিয়া এই সরকারের আমলে বিজনেস ভিসার কোনো ভবিষৎ নাই। নেক্সট মে তে নির্বাচনে যদি নতুন সরকার আসে, তখন কী ধরনের পরিবর্তন হয় ইমিগ্রেশন রুলসে সেটা কী হবে সেটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আমেরিকায় যেমন সরকার পরিবর্তন হয়েছে। ইমিগ্রেশন রুলসেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়াতেও যদি কোনো কারণে সরকার পরিবর্তন হয়, সম্ভাবনা বেশি বলেই মনে হচ্ছে, যদি তাই হয় তাহলে নতুন আবহ তৈরি হবে। নতন আবহ মানেই হলো অভিবাসনের ওপর খড়গ চলবে। আমরা যারা অভিবাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট তারা তাই মনে করছি। অস্ট্রেলিয়ায় যিনি বিরোধী দলের নেতা আছেন পিটার ডাটন, তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে চেষ্টা করবেন, তিনি ইতোমধ্যে বলেছেনও যে তিনি ইমিগ্রেশনে ব্যাপক পরিবর্তন আনবেন। পরিবর্তন তো একটা শব্দ, তো তিনি এটা কোন দিকে নেবেন, পজিটিভ না নেগেটিভ সেটা আমরা বলতে পারছি না। তবে অভিবাসীদের জন্য সামনে দিন খুব যে সুখকর খবর আসছে, তা মনে হয় না।
চলবে…