সাক্ষাৎকারে ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট কাউসার খান
স্কিলড ইন ডিমান্ড ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় যাচ্ছেন প্রচুর বাংলাদেশি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১৯:০৮

কাউসার খান অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট ও সাংবাদিক। দৈনিক প্রথম আলোর সিডনি প্রতিনিধি। অস্ট্রেলিয়ায় ইমিগ্রেশন, দেশটিতে থাকা বাংলাদেশিদের কার্যক্রম নিয়ে তার লেখালেখির সাথে সুপরিচিত দেশের মানুষ। অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশন, দেশটিতে স্টুডেন্টদের ভিসা কেন কমছে, কেন স্টুডেন্টদের ভিসায় যাচাই-বাছাই বেশি হচ্ছে, বিজনেস মাইগ্রেশন কেন প্রায় বন্ধের পথে, কেন ভিজিটর ভিসা কমছে, পড়াশোনা করে কীভাবে দেশটিতে স্থায়ী হওয়া যায়, স্কিলড ইন ডিমান্ড ভিসায় বাংলাদেশ থেকে কাদের পিআর পাওয়ার সুযোগ আছে ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন মাইগ্রেশন কনসার্নের সাথে। কাউসার খানের ইন্টারভিউ নিয়েছেন মাহবুব স্মারক। চার পর্বের ধারাবাহিকের এটি শেষ পর্ব
মাইগ্রেশন কনসার্ন: স্কিলড ইন ডিমান্ড নামে নতুন যে প্রোগ্রাম চালু হয়েছে, তাতে কি বাংলাদেশ থেকে দক্ষকর্মী যাওয়ার সুযোগ আছে?
কাউসার খান: হ্যাঁ, এই ভিসাতে কিন্তু প্রচুর বাংলাদেশি আসছেন অস্ট্রেলিয়ায়। স্কিলড ইন ডিমান্ড আসলে পুরনো একটা ভিসা প্রোগ্রাম। যখন সরকার চাপে পড়ে, তখন এটার নাম পরিবর্তন করে। এটা প্রথম ছিল working Visa 457। টার্নবুল সরকার ২০১৭ সালের দিকে এটা বন্ধ করে দিয়েছিল। তখন এটার বিরুদ্ধে একটা পলিটিক্যাল স্ট্যান্ড ছিল। সেটা পরিবর্তন করে হলো টিএসএস, টেম্পোরারি স্কিল্ড শর্টেজ ভিসা 482 সাবক্লাস করেছিল। এই ভিসায় প্রচুর বাংলাদেশি এসেছেন, প্রচুর স্পন্সর লাগে। আইএলটিএসের স্কোর অতোটা লাগে না। দুই বছর থাকলেই কিন্তু পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির অ্যাপ্লাই করতে পারে। এক বছর এক্সপেরিয়েন্স লাগে, অস্ট্রেলিয়া বা বাংলাদেশ দুই জায়গায় মিলিয়ে দেখালেও হয়। এই ভিসাটা সহজ ছিল এবং প্রচুর বাংলাদেশি আসছে এই ভিসায়। পরে সরকারের চাপের মুখে এই ভিসা প্রোগ্রামটা আবার পরিবর্তন করে হয়ে স্কিলড ইন ডিমান্ড, যেটা সাবক্লাস 482 আছে। যদি কারো ইংরেজির দক্ষতা আইএলটিএসে ৫ থাকে, তাহলে এক বছরের এক্সপেরিয়েন্স থাকে, এখানে যদি কোনো স্পন্সর থাকে, তাহলে সে আসতে পারে। এখানে ৪৫৬টা পেশা আছে।
মাইগ্রেশন কনসার্ন: তার মানে এই ভিসার ক্রাইটেরিয়া সহজ?
কাউসার খান: এই ভিসাটা কিন্তু সহজে দিচ্ছে। দুই বছর কাজ করলে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য অ্যাপ্লাই করতে পারবে। আমার জানা মতে, এই মুহূর্তে সবচাইতে বেশি সহজ ভিসা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া আসা ও স্থায়ীভাবে থাকার জন্য এই 482 স্কিলড ইন ডিমান্ড। তবে বলবো যেটা এই ভিসা নিয়ে দেশে প্রচুর প্রতারণা হয়। অনেক সময় কোম্পানি স্পন্সর করে কিন্তু নামমাত্র। এই কোম্পানি থাকে না। অনেকে অনেক সুবিধা নিয়ে এটা করে। ফলে খুব সতর্ক থাকতে হবে। আমি এটা নিয়ে দৈনিক প্রথম আলোতেও লিখেছি যে, খুব সতর্ক থাকতে হবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। মানে অস্ট্রেলিয়ায় আসবে টাকা খরচ করে তারপর কান্নাকাটি করে। অনেক সময় আমাদের দেখতে দেয় আমরা দেখি একদমই একটা ভুয়া ভিসা।
মাইগ্রেশন কনসার্ন: প্রতারণার কথা যখন এলোই, আপনাকে যদি বলি, বাংলাদেশের অনেক এজেন্ট অস্ট্রেলিয়ার ভিসা করে দেয়ার নিশ্চিত গ্যারান্টি দেয়। এই যেমন ধরেন কৃষি ভিসা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন বিজ্ঞাপন দেখছি আমরা। এসব প্রতারণা কেমন হয়?
কাউসার খান: প্রতারণাগুলো আমি বলি, কিছু দেশ আছে যাদের ভিসা লাগে না। অস্ট্রেলিয়ায় অ্যাপ্লাই করলেই দিয়ে দেয়। প্রতারণাটা আমরা খুঁজে দেখছি তারা কী করে… বাংলাদেশের রফিউল ইসলাম বা কাউসার খান… নাম ধাম সব ঠিক আছে কিন্তু পাসপোর্টের জায়গায় দেয় হলো কানাডা, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড বা সিঙ্গাপুর; এসব দেশ যাদের অস্ট্রেলিয়ায় যেতে ভিসা লাগে না। কিন্তু সিস্টেম তো জানে না আসলে যে লোকটি কোন দেশের। ফলে সিস্টেম অটো ভিসা দিয়ে দেয়। গ্র্যান্ট করে। আপনি চাইলে পারবেন। আপনার নাম দিয়েও পারবেন। কিন্তু মুশকিল হলো অস্ট্রেলিয়ান ইমিগ্রেশনে যখন পাসপোর্ট দেখাবেন বাংলাদেশি, তখন কিন্তু আপনি আর ঢুকতে পারবেন না। কারণ তাদের কাছে ওই দেশের ডাটা থাকে না। এই টেকনিকে অনেকেই ভিসাটা করে, সিস্টেমে যখন দিই তখন দেখি ঠিক আছে। কিন্তু কান্ট্রি চেঞ্জ করলে সেটা আর দেখায় না। এটা টেকনিক্যালি প্রতারণা করতেছে। মেডিকেলও যে কেউ ইচ্ছা করলে পাঠাতে পারে। সেটা নিয়েও প্রতারনা করতেছে। প্রথমে দালালরা বলে টাকা লাগবে না। ভিসা হলে টাকা ইত্যাদি প্রতারণা। ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা নিচ্ছে। আসলে সাবক্লাস ভিসাটাই আসলে বাংলাদেশের জন্য না। এই ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ নাই। তাহলে এটা আসবে কোথা থেকে। আমি যেটা দেখলাম ভিজিটর ভিসা ছাড়া, আর ভিজিটর ভিসাও অতো সহজ না। অন্য যে কোনো ভিসা অলমোস্ট ইংলিশ মানুষকে জানতেই হবে যদি কেউ অস্ট্রেলিয়া আসতে হয়।
মাইগ্রেশন কনসার্ন: সহজেই কীভাবে বোঝা যাবে যে, অস্ট্রেলিয়ার ভিসা নিয়ে প্রতারণা হচ্ছে… কোনো উপায় কি জানা আছে?
কাউসার খান: এ জন্য আমি একটা পদ্ধতি বের করেছি, ক্রস চেক। ইংরেজির টেস্ট ছাড়া কেউ যদি বলে যে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা হবে, তাহলে বুঝতে হবে যে, জালিয়াতি হচ্ছে, প্রতারণা হচ্ছে। ইংরেজির টেস্ট ছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় আসার সুযোগ নাই।
মাইগ্রেশন কনসার্ন: তার মানে অস্ট্রেলিয়া আসতে গেলে ইংরেজির দক্ষতা মানে পিটিই, টোফেল, আইএলটিএস দিতেই হবে?
কাউসার খান: অবশ্যই এসব টেস্ট দিয়ে ইংরেজির দক্ষতা আপনাকে প্রমাণ করতে হবে। ভিসা পেতে গেলে এই পরীক্ষা আপনার লাগবেই। সত্যি বলতে কী বাংলাদেশের মানুষ যদি ইংরেজিটা ভালো জানত, তাহলে নানা কাজে অস্ট্রেলিয়ায় আসতে পারত। ভিসা বিষয়ে অনেক কিছু অনলাইনে আছে। যারা অনলাইনে এসব তথ্য ঘাটতে না চান, তাহলে আসা কঠিন। অনেক সময় কোনো ক্লোজ আত্মীয়স্বজন থাকলে, স্পন্সর ভিসা এসব ইংরেজির পরীক্ষা ছাড়া আসতে পারে। তবু কেউ যদি অস্ট্রেলিয়ার সিটিজেন হয়, তার ওপর বার থাকে। কন্ডিশন থাকে। কেউ যদি ইংলিশ না জানে, আর কেউ যদি টাকা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা করে দিতে চায় ধরে নিতে হবে প্রতারণা হচ্ছে।
মাইগ্রেশন কনসার্ন: কাউসার আপনাকে ধন্যবাদ মাইগ্রেশন কনসার্নকে সময় দেয়ার জন্য
কাউসার খান: আপনাকেও ধন্যবাদ