
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:২২

অনন্য নন্দিতা স্থায়ীভাবে সুইডেনে বাস করেন।
আমার সাথে দুটো বাচ্চা থাকায় দেশ থেকে কোনো ছাত্রাবাস ঠিক করে আসতে পারিনি। উঠলাম সেই বন্ধুর বাসায়। বাসার বাইরে খেলার জায়গা যেখানে বাচ্চারা সারাদিনই নিজের মতো খেলতে পারে, আমার মেয়েরা খুব খুশি। তবে একটাই শুধু বিরক্তিকর আর তা হলো, তাদের অনেক কাপড় চোপড় পরতে হয়। প্রকৃতির সৌন্দর্য্য আমাকে সবসময় টানে, তার উপর পরিচ্ছন্ন বাতাস, রাস্তায় অতিরিক্ত ট্রাফিক নেই, হর্ন বাজছেনা, যেনো হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নটাকেই যাপন করছিলাম আমি।
সপ্তাহ যেতেই মুগ্ধতার ঘোর কাটতে লাগলো। শুধু মাথা গোঁজার ঠাঁই নয়, একটা ঠিকানা প্রয়োজন। ঠিকানা ছাড়া একজন বিদেশী অস্তিত্বহীন এখানে । সুইডিশ টেক্স অফিসে ঠিকানা রেজিস্ট্রেশনের পরই মিলবে পারসোনাল নাম্বার যার ভিত্তিতে ব্যাংক একাউন্ট খোলার সুযোগ মিলবে। এসব কিছু যোগাড়ের পরই কোনো জায়গায় চাকরির চেষ্টা জন্য আবেদন করা যাবে।এমনকি বাচ্চাদের স্কুলও মিলবেনা নির্দিষ্ট একটা ঠিকানার অভাবে। কিন্তু এই বিদেশবিভুঁয়ে কে দেবে সেই ঠিকানা?
আমাদের তিনজনের থাকার জন্য বন্ধুর বাসাটা যথেষ্ট বড় ছিলো না। বন্ধু আমার হন্যে হয়ে আমাদের জন্য বাসার ব্যবস্থার চেষ্টা করে যাচ্ছিলো। ২০১৫ এর শরনার্থী সংকটে আবাসন ব্যবস্থা নিয়ে রীতিমত হিমশিম অবস্থা সুইডেনের এই শহরগুলোতে । ঠিকানা সমেত বাসা পাওয়া প্রায় অসাধ্য হয়ে গিয়েছিলো। বাংলাদেশে আমার সহকর্মীরা কোনো অর্থেই আমার পরিবারের চেয়ে কম ছিলো না। তাদেরই একজন আমার যোগাযোগ করিয়ে দিলেন সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে থাকা প্রতিষ্ঠিত একজন বড় ভাইয়ের সাথে। তিনিই আমার শহরের কাছে একজনের সাথে কথা বলে ঠিকানার ব্যবস্থা করে দিলেন। পারসোনাল নাম্বার মিললো, কিন্তু তখনো মিলেনি মাথা গোজার ঠাঁই।
সেই ব্যবস্থারও উদ্যোক্তা স্টকহোমের সেই বড় ভাই । ওনার সুবাদেই একজন বাংলাদেশি আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন । ৪ বেডের অ্যাপার্টমেন্টের একটা রুমে থাকার জায়গা মিললো আমাদের তিনজনের । বাকি রুমগুলোর একটাতে একজন বাংলাদেশি, আর বাকি দুটোতে দুই ইরাকি থাকতেন। আমি আর আমার দুই মেয়ে বাদে বাকীরা সবাই পুরুষ। ভাবা যায়? তিনজন পুরুষের সাথে একই অ্যাপার্টমেন্টে দুটো মেয়ে বাচ্চাকে নিয়ে বসবাস করছিলাম আমি!
হয়তো সুইডেনের মতো দেশ বলেই সম্ভব হয়েছে। কখনো অস্বাভাবিক নজরে আমাদের দিকে তাকাননি তাদের কেউ। তারপরও ক্লাস করতে গিয়ে মনের মধ্যে প্রতিমুহুর্তেই একটা ভয় কাজ করতো। শুধু বাথরুমে যাওয়া ছাড়া আমার মেয়েরা সারাদিনই নিজেদের ঘরের দরজা আটকে রাখতো। বিকেলে আমি এলেই মিলতো ওদের বাইরে খেলার সুযোগ। কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিলাম না আমি ।….
চলবে…
অনন্য নন্দিতা স্থায়ীভাবে সুইডেনে বাস করেন। দেশে তিনি একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র নিউজরুম এডিটর ও নিউজ কাস্টার হিসেবে কাজ করতেন।